Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সন্ত্রাসের কোনো বর্ডার নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পশ্চিমা বিশ্ব ও অন্যরা মিয়ানমারের সঙ্গে সামরিক-বেসামরিক ব্যবসা-বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলায় দেশটির স্বেচ্ছাচারিতায় লাগাম টানা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে পশ্চিমাদের কোনো পদক্ষেপ নেই। অথচ গত চার বছরে তারা দেশটির সঙ্গে সামরিক-বেসামরিক বিনিয়োগ সাড়ে চার গুণ বাড়িয়েছে। সন্ত্রাসের কোনো বর্ডার নেই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসীরাই একদিন তাদের ওই বিনিয়োগে বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে রোহিঙ্গা সংকট ও প্রত্যাবাসন: কী করণীয় শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে ডিপ্লোম্যাট পত্রিকা। ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সব এজেন্সি ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের চার বছরের পর্যবেক্ষণ ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে রেখে উন্নতি চাওয়ার আগে পশ্চিমা নেতৃত্ব ও মানবাধিকার নেতাদের মিয়ানমারের ওপর তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে তাদের ওপর অস্ত্র ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা আরোপ করতে হবে। আব্দুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের নয়। এর দায় ও উৎপত্তি মিয়ানমারে। এর সমাধানও মিয়ানমারেই হতে হবে। সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো হয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নারী ও শিশুদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। বিভীষিকাময় অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক সীমান্তে চলে আসে। কেউ তাদের আশ্রয় দেয়নি। কেবল শেখ হাসিনা মানবতা দেখিয়ে সীমানা খুলে দিয়েছেন। আমাদের স্থানীয়রাই প্রথম খাবার, কাপড় ও আশ্রয় দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমার আমাদের শত্রু নয়, প্রতিবেশি। তারা কথা দিয়েছিল তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার। কিন্তু কথা রাখেনি। তারা এই চার বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। আব্দুল মোমেন বলেন, এটা ভাবা কষ্টকর যে মিয়ানমার আরাকানের রাখাইন স্টেটে এথনিক ক্লিনজিং ও গণহত্যায় অভিযুক্ত হওয়ার পরও পশ্চিমা নেতৃত্ব, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ও মানবাধিকার কর্মীরা সেই জাতির সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা-বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে এবং ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে চলেছে। পশ্চিমারা আমাদেরও বন্ধু। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা আমাদের সহায়তা করছে। তবে তা কেবল মানবিক ইস্যুতে। তাদের ফেরত নিতে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। বরং তারা দেশটির সঙ্গে সামরিক-বেসমারিক বিনিয়োগ এই চার বছরে সাড়ে চার গুণ বাড়িয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমা নেতৃত্ব ও মানবাধিকার কর্মীরা এতো বড় গণহত্যা চালানোর পরও মিয়ানমারের পাশ থেকে সরে যায়নি। এমনকি শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বহু গুণ বাড়িয়েছে। কেবল সুচি সরকারই নয়, মিয়ানমারের নতুন সামরিক সরকারের সঙ্গেও তারা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যদিও পশ্চিমা অনেক দেশ স্বীকার করেছে যে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন করা হয়েছে। তিনি বলেন, অতীতে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গারা সেখানে ফেরত গেছে। এখনো আমরা আলোচনার মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের ফেরাতে চাই। রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্য মিয়ানমার প্রতিজ্ঞা করলেও সেটা রাখছে না। আব্দুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কেবল বাংলাদেশের জন্য হুমকি নয়। সেখানে তিন হাজার স্কুল আছে, যেগুলো জাতিসংঘের এজেন্সিগুলো চালায়। সেখানে কেবল মিয়ানমারের কারিকুলাম অনুযায়ী তাদের ভাষায় পাঠদান করার কথা। কিন্তু সেগুলো এখন মক্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ওইসব মক্তবে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন জঙ্গি মতবাদের চর্চা হয়। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গড়ে উঠছে। তারা মানব ও মাদক পাচার করছে। ইদানীং মাদক পাচারের টাকার ভাগভাগি নিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে। ক্যাম্পের নিরাপত্তা বাড়াতে আমরা চারপাশে বেড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা আবার আমাদের অনেক বন্ধু স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। সন্ত্রাসের কোনো বর্ডার নেই। আজ তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখে মিয়ানমারকে ব্যবসা-বিনিয়োগের হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছে। অথচ এক সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্ম নেয়া সন্ত্রাসীরাই মিয়ানমারে ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একদিকে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গণহত্যার অভিযোগ উঠছে; অন্যদিকে ভারত, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, ফিলিপাইন তাদের কাছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। তা না হলে মিয়ানমারের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে না। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সে দেশের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন যে সপ্তাহখানেকের মধ্যে মিয়ানমার সফরে যাবেন। সেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তিনি কথা বলবেন। এটা ভালো খবর। মিয়ানমারে জার্মানির বিনিয়োগ না করার সিদ্ধান্তকেও ভালো খবর বলে উল্লেখ করেন মোমেন। সবশেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে রেখে ভালো রাখা যাবে না। তাদের ভালো রাখতে হলে দ্রুত নিজেদের বসতভিটায় ফেরত পাঠাতে হবে। এটাই বাংলাদেশের বিশ্বাস। এটাই সত্য।
http://dlvr.it/SFp7gd

Post a Comment

0 Comments