Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

কনকনে শীতে কাজ কম, অনটন

শীতের কুয়াশা ভরা সকাল। ঘাড়ে মোটরগাড়ির ফুলানো টিউব, সাথে ঢাকি কোদাল এবং চালনি। গন্তব্য মহানন্দা। তার ঠাণ্ডা জলরাশি থেকে পাথর সংগ্রহ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর বুক থেকে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে সংসার চলে। আয়ের উৎস থেকে জমানো টাকা দিয়ে চলে ঋণের কিস্তি শোধ। শীত এবং বর্ষা জীবনের সাথে মিশে গেছে রহমত আলীর। তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সিপাইপাড়া গ্রামে বাড়ি রহমতের। ৩০ বছর ধরে মহানন্দার পানিতে গা ভাসিয়ে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করেই জীবন চালিয়ে আসছেন তিনি। ছেলে মেয়ে নিয়ে ছয় জনের সংসার। নদী তীরের বিভিন্ন পাথর কোয়ারিতে তিন ছেলে তো কাজ করেই, স্ত্রীও বসে থাকেন না। শীতের সকালে মহানন্দার তীরে চলছে পাথর সংগ্রহের প্রস্তুতি। ছবি: নিউজবাংলা একবেলা কাজ না করলে পরের বেলায় না খেয়ে থাকতে হবে। প্রতিদিনের রোজগার থেকে আলাদা করে রাখতে হয় টাকা, কারণ সপ্তাহ ঘুরলে ঋণের কিস্তির টাকা নিতে চলে আসেন এনজিও কর্মী। তাই তাদের কাছে কী শীত, কী বর্ষা কাজ ছাড়া বিকল্প নেই। বন্দরে পাথার ভাঙ্গার কাজ করেন চার সন্তানের জননী মরিয়ম বেগম। দুই বছর ধরে স্বামী আলাদা ঘর করছেন। প্রতিদিন ৩০০ টাকা হাজিরায় কাজ করেন মরিয়ম। শীতে কাজ করতে কষ্ট হয় তার। এবার কনকনে শীতেও পাথর ভাঙ্গাসহ মহানন্দা থেকে সকাল-সন্ধ্যা পাথর সংগ্রহের কাজ চলছে শত শত শ্রমিকের। বাংলাবান্ধা থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার অংশে মহানন্দা প্রবাহিত হয়েছে। নদী পাড়ের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের জীবিকা নদীকেন্দ্রিক। গ্রামের মানুষ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নদীর গভীর অংশ থেকে পাথর সংগ্রহ করে পাড়ে স্তূপ করে। নারী ও শিশুরা সেই পাথর আকার অনুযায়ী বাছাই করে। সন্ধ্যায় মহাজনের কাছ থেকে মজুরি নিয়ে বাড়ি ফেরে তারা। একজন পুরুষ শ্রমিক দিনে আয় করেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। নারীরা পান সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। বছর জুড়ে চলে পাথর তোলার কাজ। বাদ সাধে শীতকাল। হিমালয়ের খুব কাছে অবস্থান হওয়ায় এই এলাকায় শীতের তীব্রতা বেশি। ঠাণ্ডায় কাজের পরিধি কমে যায়। তাতে টান পড়ে মজুরিতে। এ অঞ্চলের ৩০ শতাংশ নারীই বিয়ে বিচ্ছেদের পর একা সংসারের হাল ধরেছেন। ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করতে হয় তাদের। সকাল-সন্ধ্যা পাথর সংগ্রহের কাজ চলে শত শত শ্রমিকের, তবে শীতে কাজের গতি কমে যায়। ছবি: নিউজবাংলা বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কুদরত ই খুদা মিলন বলেন, বাংলাবান্ধা থেকে ভজনপুর পর্যন্ত এই উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জীবিকা এক সময় ছিল পাথর কেন্দ্রিক। ভূগর্ভস্থ পাথর তোলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব মানুষের একটা বড় অংশই এখন বেকার। এদের কেউ কেউ কাজ করছেন সমতলের চা বাগানগুলোতে, কেউ বন্দরে, আবার কেউ নদীর পাথর উত্তোলন করে জীবন চালাচ্ছেন। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র বর্মন বলেন, সীমান্তবর্তী এই উপজেলায় তেমন শিল্পকারখানা গড়ে না ওঠায় কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। সরকারিভাবে এই উপজেলায় ভূমিহীন ছিন্নমূলদের বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। অভাবের সময় মানুষদের নানাভাবে সরকারি অনুদানের আওতায় আনা হচ্ছে। বন্দর ব্যবস্থাপনা জোরদার করে অনেক মানুষকে কাজে লাগানো হয়েছে।
http://dlvr.it/SGkqz7

Post a Comment

0 Comments