ছোট ছোট সাতটি দল ও সংগঠন নিয়ে গঠন করা জোট গণতন্ত্র মঞ্চ সরকারকে দেশ ছাড়ার চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছে। জোটের প্রবীণ নেতা আ স ম আবদুর রব দাবি করেছেন, বিশ্বের কোনো দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়েনি।
সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে সমঝোতা করে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়া এই রাজনীতিক এটাও বলেছেন, গণতন্ত্র মঞ্চের কারও আপোষ করার ইতিহাস নেই।
আত্মপ্রকাশের তিন দিন পর মঞ্চের পক্ষ থেকে ডাকা প্রথম বিক্ষোভে এ কথা বলা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাসের সামনে এই বিক্ষোভ হয়।
গত ৮ আগস্ট জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে এই গণতন্ত্র মঞ্চের ঘোষণা দেন।
এর মধ্যে জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জোটসঙ্গী ছিল। এই দুটি ছাড়াও গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবার বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। আবার তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে।
প্রথম কর্মসূচিতে জোট নেতারা সরকারকে বিদায় না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার কথা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ স ম রব সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, আজকে দেশ শ্রীলঙ্কা হওয়ার পথে। এই সরকারের লোকদের বলব, আপনারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালাবেন সেই চিন্তা করুন।
এই বিক্ষোভ যেসব কারণে ডাকা হয়েছে, তার একটি কারণ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। সরকার বলছে, বিশ্ববাজারে বাড়ার কারণে বাংলাদেশেও একই সিদ্ধান্ত নেয়ার বিকল্প ছিল না। আর তেলের দাম দেশে দেশেই বেড়েছে।
তবে রব বলেন, পৃথিবীর কোথাও জ্বালানি তেলের দাম এমন বেড়েছে এর উদাহরণ কোথাও নেই। দেশে সরকার নেই, দেশে আছে সার্কাস। সরকার সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি। সিন্ডিকেট যে দিকে সুইস দেয় সরকার সেভাবেই কাজ করে।
তিনি বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নই। সারাদেশে হাহাকার চলছে। তাই এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের কোনো নেতার অতীতে আপোষ করার কোনো ইতিহাস নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের লড়াই গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই, আমাদের এই লড়াইয়ে জিততে হবে। এই সরকারকে যেতে হবে।
এই সরকার বলেছে মরে গেলেও ক্ষমতা ছাড়বে না। আর আমরাও মরে গেলে কোন আপোষ করব না। রাস্তায় গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা চোর, ডাকাত, লুটেরা। আমরা দেশকে, দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকারকে হটাতে চাই। আমরা শুধু সরকারের পদত্যাগই চাই না। আমরা চাই এই দেশের গঠনমূলক পরিবর্তন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের একটি প্রাচীন দল। কিন্তু দেশের জনগণ এখন তাদের ঘৃণা করে। তাই দেশের জনগণকে আর তাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ নিয়ে সরকারের ভয় শুরু হয়েছে। আমাদের ভয় পাওয়ার কারণ হচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলবে। আমরা শুরু থেকেই বলছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আর না হয় কঠিন থেকে কঠিনতর আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটানো হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ নাকি বলেন, এটা আমাদের প্রথম কর্মসূচি। এই সরকারকে বিদায় করা না পর্যন্ত আমরা মাঠে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, সরকার চাপাবাজি করে বলছে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকার বুঝতে পারছে তারা বিদায় নিলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই তারা মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য এক এই ফ্যাসিবাদ সরকারকে সরিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
এ সময় ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খানও বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন।
বিক্ষোভ শেষে একটি মিছিল বের হয়।
http://dlvr.it/SWSS9Q
0 Comments