কেউ দেখছেন পাঞ্জাবি, কেউ দেখছেন ফতুয়া। কেউ আবার দাদা ও বাবাকে ভিডিও কলে রং ও ডিজাইন দেখানো শেষে দরদাম করছেন। ঈদ হবে ঐতিহ্যের পোশাকে তাই পরম্পরার খাদিতে মজেছে্ন ক্রেতারা। এমন দৃশ্য এখন কুমিল্লার খাদি পোশাকের দোকানে। খাদি এখন শুধু পরিবারের পুরুষ সদস্যদের পোশাকে সীমাবদ্ধ নয়, খাদি কাপড়ে নারীদের থ্রি-পিস ও শাড়ির চাহিদাও দেখা গেছে।
অন্য পোশাকের তুলনায় সাশ্রয়ী দাম এবং ব্যবহারে আরাম। তাই সচেতন ক্রেতারা ঈদের কেনাকাটায় স্থানীয় উৎপাদিত খাদির পোশাককে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সবগুলো খাদির দোকানে সকাল থেকে রাত অবধি ক্রেতা পদচারণায় মুখর হয়ে আছে।
দোকানে ঘুরে ও খাদি কাপড় বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে কুমিল্লা শহরে খাদির নাম সংযুক্ত দোকান আছে চার শতাধিক। রামঘাট থেকে রাজগঞ্জ বাজারের পশ্চিম দিক পর্যন্ত বিস্তৃত এসব খাদি কাপড়ের দোকান।
কারিগরদের শৈল্পিকতার ছোঁয়ায় দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয়ে আসছে খাদি। আগে এক রংয়ের খাদিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন বাহারি রংয়ের খাদি কাপড়ে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রি-পিস আর শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। এসব পোশাক এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। বর্তমানে কুমিল্লা জেলায় দেড় হাজার পরিবার এই পেশায় জড়িত। খাদি কাপড় বিক্রির আলাদা মার্কেট হিলটন টাওয়ার রয়েছে নগরীর রাজবাড়ি এলাকায়।
খাদি কাপড়ের প্রতিটি পাঞ্জাবি গড়ে ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪০০টাকা, শার্ট ৬০০ থেকে ৭০০টাকা, থ্রি-পিস ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০টাকা, শাড়ি ৭৫০ টাকা ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে বিছানার চাদর ও বালিশের কভার। রয়েছে খাদির থান কাপড়, ছোটদের পাঞ্জাবি ও শার্ট।
গবেষক আহসানুল কবীর জানান, খাদির গোড়াপত্তন হয়েছে একশো বছরের বেশি সময় আগে। ওই সময় শুধু খাদি কাপড় নয়, কুমিল্লার বেনারসি শাড়িরও তুমুল চাহিদা ছিল। স্বদেশী আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধী বিদেশি পণ্য বয়কটের ডাক দেন। মোটা কাপড়, মোটা ভাত-সর্বত্র এমন আওয়াজ ওঠে। স্বদেশী আন্দোলনের পর খাদি কাপড়ের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। মহাত্মা গান্ধী নিজেও খাদির চাদর পরিধান করতেন। কুমিল্লার মানুষ খাদি কাপড় পছন্দ করতেন। বড় বড় নেতারা খাদির পায়জামা, চাদর, পাঞ্জাবি পরে গৌরববোধ করতেন। এটার প্রচলন গত ৩০ বছর পূর্বেও ব্যাপক হারে ছিল। খাদি কুমিল্লাকে ব্র্যান্ডিং করে। একে ভালোভাবে টিকিয়ে রাখা জরুরি। ঈদ-পূজায় মানুষ খাদির পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করা আফসানা বেগম বলেন, বেতন বোনাস পেয়েছি। বাবা ও শ্বশুরের জন্য দুটি খাদির পাঞ্জাবি কিনেছি। আর আমার বরের জন্য একটি ফতুয়া। নামাজ পড়ে সারা দিন আমার বর ফতুয়া পড়ে ঘুরে বেড়ায়।
ব্যবসায়ী জাবেদ কাউসার বলেন, দেশের বাইরে গিয়ে শপিং করার সামর্থ আছে। তবে খাদির পাঞ্জাবি ও ফতুয়ার মতো আপন পোশাক আর কোথাও নেই। এবার আমি নিজের জন্য এবং বন্ধুদের জন্য অনেকগুলি খাদির পাঞ্জাবি কিনেছি। দিন দিন খাদি মসৃণ হচ্ছে। ডিজাইনেও এসেছে নতুনত্ব।
খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা জানান, বর্তমানে খাদি শিল্পে অনেক নতুন নতুন ডিজাইন এসেছে। ১৯২১ সালের প্রেক্ষাপট ও চাহিদা এক নয়। শতবর্ষের খাদি পণ্য তার গুণগত মান বজায় রেখে আধুনিকতার সংমিশ্রণে প্রতিযোগিতার বাজারে চাহিদা ধরে রেখেছে।
http://dlvr.it/SmLh3T
0 Comments