আয়কর আইন ২০২৩ এবং ফাইনান্স বিল ২০২৩-এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী, পাবলিকলি ট্রেডিং কোম্পানির জন্য কর্পোরেট করের হার অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার স্থানান্তরিত করা পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানিগুলোতে শেয়ারের শতকরা হারের ওপর ভিত্তি করে হ্রাসকৃত কর হার প্রযোজ্য রয়েছে।
পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আইপিওর মাধ্যমে তাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক পরিমাণের শেয়ার স্থানান্তরিত করা হলে করের হার ২০ শতাংশ, অন্যথায় করের হার ২২.৫০ শতাংশ প্রযোজ্য হবে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বিএসইসি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে, স্টক মার্কেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য তাদের শেয়ারের কমপক্ষে ১০ শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে। ২০১৫-এর পাবলিক ইস্যুর নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানিগুলোর অন্ততপক্ষে তাদের শেয়ারের ১০ শতাংশ হোল্ডিং হ্রাস করবে।
একবার আইপিওর পরে একটি কোম্পানি পুনরায় আর একটি আইপিও করতে পারবে না, বরং তারা এখানে একটি এফপিও (ফলো-অন পাবলিক অফারিং) করতে পারে, যা শর্তগুলোতে অন্তর্ভুক্ত নয়। আমরা এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কিছু পরিবর্তন আশা করেছিলাম।
এই পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি গুলিতে হ্রাসকৃত করের হার উপভোগ করতে হলে, অবশ্যই কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথমত, সমস্ত প্রাপ্তি এবং আয়সমুহ ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে করতে হবে। একটি একক খরচের লেনদেন সর্বাধিক টাকা ৫ লাখের বেশি হলে তা ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে করতে হবে। তা ছাড়াও বিনিয়োগ এবং ব্যয়ের জন্য নগদ প্রদান বছরে সর্বাধিক টাকা ৩৬ লাখের বেশি হবে না।
এই শর্তগুলোপূরণ না করলে অতিরিক্ত ২.৫ শতাংম কর দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেকটি কোম্পানির আকার বিভিন্ন হওয়া সাপেক্ষে এই বিধানটি সমস্ত কোম্পানির জন্য উপযোগী নয়। ক্যাশলেস অর্থনীতির এই পদক্ষেপটির জন্য আমরা এনবিআরকে সত্যিকারে স্বাগত জানাই।
আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতে ২০১৬ সালে তাদের লেনদনের শতকরা ৪ শতাংশ ক্যাশলেস ছিল যা ২০২৩ সালে ৭৮শতাংশে এ উন্নীত হয় এবং এই পদক্ষেপটিকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে সমন্বিত হয়ে কাজ করতে হবে।
বিশেষ উদ্দেেশে বিনিয়োগের জন্য কর মুক্তির সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে যার মধ্যে শুধু অল্টারনাটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড নয় আরও আছে মিউচুয়াল ফান্ড, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট এবং এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড। বিশেষ উদ্দেশ্যগুলো পূরণকল্পে কর অব্যাহতি উল্লেখযোগ্য হারে অংশগ্রহণ এবং বিনিয়োগ বাড়তে উৎসাহিত করবে। কর মুক্তির এই বৃহৎ উদ্যোগটির ফলে এটি আশা করা যাচ্ছে যে, আগামী বছরগুলোতে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণ আর বৃদ্ধি পাবে।
একক ব্যক্তির মিউচুয়াল ফান্ড থেকে আয় ২৫ হাজার টাকা এবং তালিকাভুক্ত শেয়ার থেকে লভ্যাংশ বাবদ আয় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অব্যাহতি প্রাপ্তির সুবিধাটি বাতিল করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থানে যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ইতিমধ্যে ব্যক্তিদের উপর বৃহৎ চাপ তৈরি করছে, এমন পরিস্থিতিতে মূলধন বাজারে বিনিয়োগ করা নিম্ন আয়ের করদাতাদের করের দায়ভার না কমিয়ে বরং বৃদ্ধি করবে।
সনদপত্র, মিউচুয়াল ফান্ড, ইটিএফ, সিআইএস খাতে বিনিয়োগের সর্বাধিক সীমা ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নির্ধারিত সীমা যদি পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারদের দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে কর্পোরেট বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হবে যেহেতু সাধারণ ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের পুজিবাজারে বিনিয়োগের কোন সীমা নির্ধারিত নেই।
২০১৫ সালের ৩০ জুন জারি করা এসআরও অনুযায়ী, স্পন্সর শেয়ারধারী ব্যতীত ব্যক্তি বিনিয়োগকারী একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রয়ের আদান প্রদানের ওপর অর্জিত মূলধনী আয়ের ওপর কর অব্যাহতি প্রাপ্ত হন। আইটিও, ১৯৮৪ এর অধীনে জারি করা এসআরও ১৯৬, নতুন আয়কর আইন ২০২৩-এর সঙ্গে ততক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত নতুনভাবে জারি কোনো এসআরও এটাকে বাতিল না করে।
লেখক: পরিচালক, এসএমএসি অ্যাডভাইজারি সার্ভিসেস লিমিটেড
http://dlvr.it/SqbRHD
0 Comments