Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

তিস্তা-ধরলা-যমুনায় ভাঙ্গন, শঙ্কায় তীরবর্তী মানুষ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরক মন্ডল গ্রামের কৃষক বদিউজ্জামান। মাত্র ২০-২২ শতক জমির মধ্যে চারটি টিনশেড ঘরে গবাদি পশুসহ বাড়ির সদস্যদের নিয়ে বসবাস করেন। বছর তিনেক আগেও তার সাড়ে চার বিঘা আবাদী জমি ছিল। কিন্তু তিন বছরের মধ্যেই সেগুলো ধরলার পেটে চলে গেছে। এখন শেষ সম্বল বসতভিটাটুকুও গিলে খেতে চায় আগ্রাসী ধরলা; নদী থেকে মাত্র ১০ হাত দূরে রয়েছে তার বাড়ি। এটুকু বিলীন হয়ে গেলে মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকুও হারিয়ে যাবে। কোথায় যাবেন তার ঠিকানা নেই। ফলে নির্ঘুম রাত কাটছে বদিউজ্জামানের। তার মতো একই অবস্থা নুর নবীর। নদী ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়ায় পরিবার নিয়ে বাপ-দাদার ভিটামাটি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে অন্যত্র। এমন দুর্ভোগ আর করুণ অবস্থা বিরাজ করছে পুরো চর গোরক মন্ডল এলাকায়। ধরলা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বিগ্নতাও বাড়ছে নদী তীরবর্তী মানুষের মনে। নদীর স্রোত বাড়ার সঙ্গে নদীর তীরও ভেঙ্গে চলেছে সমান তালে। প্রতিদিন রাতেই হারিয়ে যাওয়ার ভয় নিয়ে ঘুমাতে যেতে হচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষের। স্থানীয় প্রশাসন ও সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরণা দিয়েও মিলছে না প্রতিকার। সর্বগ্রাসী ধরলার তাণ্ডবে সব হারানোর শঙ্কায় কুমিগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার চর গোরক মন্ডল এলাকার বাসীন্দাদের। ছবি: নিউজবাংলা ভুক্তভোগী বদিউজ্জামান বলেন, আমার সাড়ে চার বিঘা কৃষি জমিসহ বসতবাড়ি ছিল। কয়েক বছরের মাথায় ধরলার ভাঙ্গনে কৃষি জমি এখন নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন শুধু বাড়ির ভিটাটুকু রয়েছে; তাও এখন ভাঙ্গনের মুখে। জায়গা-জমি না থাকায় ঘরগুলো এখনও সরাতে পারিনি। ভেঙ্গে গেলে আল্লাহ যেখানে আশ্রয় দিবে, সেখানেই যেতে হবে। একই এলাকার নুর নবী মিয়া বলেন, নদীর ভাঙ্গন যেভাবে শুরু হয়েছে তাতে আর বাপ-দাদার ভিটায় থাকা হচ্ছে না। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছি পরিবারসহ। ভাঙ্গনের বিষয়ে আব্দুল গণি বলেন, গত বছর থেকে ধরলা নদীর ভাঙ্গন তীব্র হয়েছে। ডিসি, নির্বাহী প্রকৌশলী ও এমপির কাছে গেছিলাম আমরা (গ্রামবাসী)। কিন্তু তারা শুধু দুহাজার জিও ব্যাগ দিছিল ভাঙ্গন রোধে। বর্তমানে সেই জিও ব্যাগসহ চর গোরক মন্ডল এলাকার একটি রাস্তাও নদীতে চলে গেছে। দেশের সর্ববৃহৎ নদী-বিধৌত এ জেলায় সারা বছর ধরে নদ-নদীর পানি কমা-বাড়ার সঙ্গে ভাঙ্গনের গতিপ্রকৃতিও ওঠানামা করে। ফলে অস্থায়ী কাজ করে ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব নয়। তাই নদী খনন আর স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। ইতোমধ্যে ধরলা নদীর ভাঙ্গনে এই এলাকায় প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বিলীন হয়েছে প্রায় আড়াই শত বিঘা কৃষিজমি। তিস্তার ভাঙ্গনের হাত থেকে শেষ সম্বলটুকু বাঁচাতে নিজেদের ঘর-বাড়ি খুলে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রেখেছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা পশ্চিমপাড়া এলাকার অনেকে। ছবি: নিউজবাংলা উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের বজরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের ভাঙ্গন-কবলিতদের নিজস্ব জমিজমা না থাকায় তিস্তা নদী তীরবর্তী মানুষেরা তাদের বাড়িঘর সরিয়ে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রেখেছে। ঈদের ১০-১২ দিন আগে থেকেই এ এলাকায় ভাঙ্গন চলছিল। জিও ব্যাগ দিয়ে সরকারি স্কুলটি রক্ষার শেষ চেষ্টা করা হলেও জিও ব্যাগসহ সেটিও নদীগর্ভে চলে যায়। এসময় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি। ফসলের ক্ষেতসহ শত বিঘা আবাদি জমি গ্রাস করে নিয়েছে ধরলা। সেই সঙ্গে গাছপালা-পুকুরও নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী এ এলাকার শহিদুর ইসলাম বলেন, তিস্তার ভাঙনে বজরা পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আর রক্ষা করা যায়নি। সেই সঙ্গে ঠিকানা হারিয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। আরও দেড় শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এই গ্রামের আব্দুল খালেক বলেন, আগুন লাগলেও মাটি থাকে, কিন্তু নদী ভাঙ্গলে কিছুই থাকে না। এ নিয়ে ১২ বার তিস্তার ভাঙ্গনে পড়েছি। ঘরবাড়ি সরাতে সরাতে দেয়ালে আমার পিঠ ঠেকে গেছে। ঠাঁই নেয়ার মতো কিছুই নেই। বাধ্য হয়ে রাস্তার মধ্যে জিনিসপত্র রেখেছি। এখন আমরা কোথায় যাব, কী করব- সেই চিন্তায় ঘুম আসে না। ত্রাণ-টাকা-পয়সা কিছুই চাই না আমরা। আমরা চাই তিস্তা নদীতে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধে সরকার পদক্ষেপ নিক। নাওডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান হাছেন আলী বলেন, চর গোরক মন্ডল এলাকার নদীর তীব্র ভাঙ্গন বড়ই উদ্বেগ বাড়িয়েছে। দ্রুত এ এলাকার ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, পাঁচ শতাধিক পরিবারসহ কৃষিজমি এবং প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীণ মুজিব কেল্লাটি হুমকির মুখে পড়বে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, জেলার তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীর ২৬টি পয়েন্টে ২৫ কিলোমিটার ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে চার কিলোমিটার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও ভাঙ্গন মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত মালামাল রয়েছে। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার খিদ্রচাপড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি গিলে খাচ্ছে সর্বনাশা যমুনা। ছবি: নিউজবাংলা সিরাজগঞ্জে তাণ্ডবলীলায় মেতেছে যমুনা সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে খিদ্রচাপড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন এবং ওই এলাকার অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। রোববার বিদ্যালয়টির দুটি কক্ষ চোখের পলকে যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বেলকুচি উপজেলার মেহেরনগর থেকে চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর স্পার বাঁধ পর্যন্ত যমুনার ভয়াবহ ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজে গাফিলতি ও প্রকল্প এলাকার কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এই ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন যমুনায় পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু হওয়ায় জিও ব্যাগ নিক্ষেপ বন্ধ রয়েছে। ফলে দুইদিন ধরে ভাঙনের তীব্রতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। খিদ্রচাপড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরিদ আহম্মেদ নয়ন বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে ১৪২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রায় ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৮ সালে বিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবন ও আশ্রয় কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের হুমকির মুখে পড়ে। নদীর ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদান করার মতো আর কোনো জায়গা রইল না। বড়ধুল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সুজন সরকার বলেন, যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হারাচ্ছে এলাকাবাসী।
http://dlvr.it/SrfpgH

Post a Comment

0 Comments