Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

রইল বাকি দুই

শার্ট বা টি-শার্টের কলার উঁচিয়ে কিশোর-তরুণরা খেলার মাঠে নামত। পথে-ঘাটে এমনকি বাড়ির আঙিনাতেও কলার ভাঁজ করতে ছিল অনীহা। প্রথম যখন এ প্রচলন শুরু হলো, এলাকার মুরুব্বিরা তা ভালো চোখে দেখেননি। কিন্তু বছরের ব্যবধানে ক্রিকেট কী, তা না বোঝা মুরুব্বিরাও মাশরাফি বিন মুর্তজার নামের সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করেন। জানতে পারেন, কলার উঁচিয়ে আগ্রাসী ভঙ্গিতে বল ছুঁড়ে মাশরাফি পাকিস্তান-ভারতের খেলোয়াড়দের মনেও ভয় ধরাচ্ছেন। এতে পাড়ার কিশোররা যখন কলার উঁচিয়ে নিজেকে মাশরাফি পরিচয় দিত, তখন তাদের তেমন একটা ধমকের মুখে পড়তে হতো না। এরপর ধীরে ধীরে মাশরাফির জনপ্রিয়তায় ভাগ বসাতে শুরু করেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত হন তারা। একসঙ্গে প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে মন জয় করেন দর্শকদের। এ পাঁচ তরুণ পরিচিতি পান পঞ্চপাণ্ডব শব্দগুচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট মানেই ওই পাঁচ টাইগার। দেশের মানুষ এ পাঁচজনের ওপরই ভরসা করে থাকতেন। তামিম না পারলে সাকিব আছে, সাকিব না পারলে মুশফিক। সবাই ব্যর্থ হলেও আশা থাকত সাইলেন্ট কিলার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ঘিরে। এদের কেউ প্রতিপক্ষের বল ঠেকাতে না পারলেও বল হাতে দ্বিতীয়ার্ধেই আসছেন মাশরাফি। প্রথম ওভারের প্রথম বল হাতে মাশরাফির দৌড় শুরু করা মাত্র দর্শকদের উচ্ছ্বাস মাঠে উত্তেজনা ছড়াত। এরপরই সাকিবের বলের ঘূর্ণি বিজয় ছিনিয়ে আনার পথ তৈরি করে দেবে এ বিশ্বাসে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশায় থাকত দেশ। এ পঞ্চপাণ্ডব জাতীয় দলে দীর্ঘ সময় একসঙ্গে ছিলেন। তাদের চাপ সামলে খেলার মানসিকতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দলকে নেতৃত্ব, পরিশ্রম সবই মন কেড়েছে দেশবাসীর। মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ, তামিম, সাকিব, মুশফিকের আসনে বসানো যায়, এমন কাউকে এখনও খুঁজে পাননি ভক্তরা। কিন্তু পঞ্চপাণ্ডবের ডিবি ঠিকই ভেঙে মাঠে মিশে যাচ্ছে। সর্বশেষ তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা এলাকার হোটেল টাওয়ার ইনে সংবাদ সম্মেলনে তার এ ঘোষণা আসে। এদিকে ভারতের মাটিতে ক্রিকেট বিশ্বকাপের বাকি আর মাত্র তিন মাস। এরই মধ্যে তামিমে বিদায়ের ঘোষণায় ধাক্কা খেয়েছেন ভক্তরা। এ ধাক্কা যে জাতীয় দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দেরও সইতে হচ্ছে তা অনুমেয়। সংবাদ সম্মেলনকক্ষে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে অবসরের বিষয়ে তামিম বলেন, ইয়েস্টারডে অ্যাগেইনস্ট আফগানিস্তান ওয়াজ মাই লাস্ট ইন্টারন্যাশনাল গেম (গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচই ছিল আমার শেষ আন্তর্জাতিক খেলা)। আই অ্যাম রিটায়ারিং ফ্রম ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট ইফেক্টিং রাইট নাউ (আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি, যা এই মুহূর্ত থেকে কার্যকর হচ্ছে)। আফগানিস্তানের বিপক্ষের ওই খেলায় তামিম ১৩ রান করেন। এ খেলায় সাকিব করেন ১৫, মুশফিক ১ রান তুলেই বিদায় নেন। তামিমের চেয়েও মাশরাফির অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা ভক্তদের মধ্যে বেশি আলোড়ন তুলেছিল। বিশেষ করে, মাশরাফির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মতো। কারণ, সাংবাদিক হলেও তারা জাতীয়তাবাদের ঊর্ধ্বে নন। মাশরাফিকে তখন ক্রিকেটে দেশের নেতা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছিল। এরপর মাশরাফি যেন হারিয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে জ্বলন্ত মোমবাতি যেভাবে নিঃশেষ হয় ঠিক তেমনই। মাশরাফির শেষ আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তারিখটা ২০২০ সালের ৬ মার্চ। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে শেষবারের মতো আন্তর্জাতিক ওডিআই খেলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তারিখটা ৬ মার্চ ২০২৩, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে তার লড়াই শুরু হয়। এ তিনজনের বিদায়ের পর রইলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। মুশফিককের মাঠের পারফরম্যান্স নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এসব নিয়ে তার চিন্তিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। অপরদিকে সাকিব ব্যবসাসহ ক্রিকেট মাঠের বাইরের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করছেন। এ দুজনের বিদায়ের ঘণ্টা শুনাতে হয়তো আরেকটা সংবাদ সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণের অপেক্ষা মাত্র। সময়ের বাড়ার সঙ্গে কষ্টকর হলেও বিদায় প্রাসঙ্গিক। প্রশ্ন হচ্ছে, ভিন্ন নামে জাতীয় দলে পঞ্চপাণডবের ফিরে আসার পাইপলাইন কতটা প্রস্তুত।
http://dlvr.it/Srmlm4

Post a Comment

0 Comments