Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ড. ইউনূসকে সুজনের খোলা চিঠি

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি লিখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র খোরশেদ আলম সুজন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক তিনি। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই খোলা চিঠির কথা জানান তিনি। পাঠকের জন্য তা হুবহু তুলে দেয়া হলো। শ্রদ্ধা জানবেন। আমি খোরশেদ আলম সুজন। আপনি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, আমি তখন প্রাণের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ছিলাম। সে হিসেবে আপনাকে আমি সবসময় শিক্ষাগুরুর মর্যাদার আসনে রেখেছি, যদিও আমি সরাসরি আপনার বিভাগের ছাত্র নই। আপনি যখন হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে দরিদ্র নারীদের ঋণদানের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করলেন, তখন থেকেই আমি আপনার একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক ছিলাম। মত-পথ আলাদা হলেও আপনার এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড আমি পর্যবেক্ষণ করতাম। ঋণদানের মাধ্যমে গরিবকে স্বাবলম্বী করে দারিদ্র্য হটানোর যে পন্থা আপনি নিয়েছিলেন, সেটা আপনার প্রথম উদ্যোগ জোবরা গ্রামেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল এবং সেই ক্ষুদ্র ঋণদান প্রকল্পের শিকার হয়ে অনেক মানুষকে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে ভিটেহারা হতেও আমরা দেখেছি। আপনার গৃহীত প্রকল্পগুলো খুব একটা সফল না হলেও আপনি একজন ব্রিলিয়ান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে সর্বহারা বিপ্লবের ভয়ে সন্ত্রস্ত পশ্চিমা বিশ্বের কাছে এক বিপ্লব ঠেকানো আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছিলেন। এরপর এই গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণদান নিয়েই আপনার বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য এবং একপর্যায়ে আপনার নোবেলপ্রাপ্তির ঘটনা আমি সবার মতো অবলোকন করেছি। আপনি যখন শান্তিতে নোবেল পেলেন, তখন বাংলাদেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে আন্দোলনে ছিলাম, প্রতিদিন আমাদের নেতাকর্মীদের রক্ত ঝরছিল রাজপথে। এর মধ্যেই আপনি ঢাকার তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সংবর্ধনা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে বিতর্কিত নির্বাচনে যাওয়ার নসিহত করেছিলেন, মনে কষ্ট পেয়েছিলাম। একজন নোবেলজয়ী হিসেবে আপনার সেই বক্তব্য অভিভাবকসুলভ ছিল না। এরপর জরুরি পরিস্থিতি এল। সেই বিশেষ পরিস্থিতিতে আপনি একটি রাজনৈতিক দল গঠনে উদ্যোগী হলেন এবং পরে আবার পিছিয়ে গেলেন। জরুরি অবস্থায় রাজনীতি নিয়ে আপনার অবস্থান এবং নানা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আমার মতো অনেকের আপনার প্রতি শ্রদ্ধার আসন আপনি নড়বড়ে করে ফেলেছিলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। জরুরি অবস্থা পেরিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এল। ততদিনে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে আপনার বয়স পেরিয়ে গেল। কিন্তু বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আপনি সেই পদে থেকে যেতে আগ্রহী ছিলেন, এটাও নোবেলজয়ী হিসেবে আপনার অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না বলে মনে করি। সেই পদে থাকতে না পেরে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আপনি আটকে দিয়েছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এর বিশ্বাসযোগ্য কোনো সদুত্তর আপনার কাছ থেকে পাইনি। আপনার এই কর্মকাণ্ড আমার মতো কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের কারণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়াই দেশের টাকায় আজ পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। সেই সময় থেকে প্রতিনিয়ত আপনার পক্ষ নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিশ্বনেতাদের বক্তব্য-বিবৃতি আমাদের হতবাক করেছে। আপনি সম্মানী মানুষ অবশ্যই। আপনি নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব, দেশবাসী আপনাকে অবশ্যই মাথার ওপরে রাখবে। কিন্তু বিশ্বনেতাদের বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আপনাকে সম্মান দেয়ার জন্য নসিহত করতে হবে, সরকারকে চোখ রাঙানিসহ বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে হবে, এটা কাম্য নয়। এরপর আপনার বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ স্থানান্তর, গ্রামীণফোনের শেয়ার কেলেঙ্কারি, শ্রম আইন লঙ্ঘনসহ আরও যেসব অভিযোগ উঠেছে এবং ইতোমধ্যে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে, এটা শুধু নোবেলজয়ী হিসেবে আপনার জন্য নয়, দেশের জন্যও লজ্জার বলে আমরা মনে করি। আপনি যত বেশি শিক্ষিত-সচেতন, সমাজ আপনার থেকে তত বেশি দায়িত্বশীলতা আশা করে। গ্রামীণ ব্যাংকসহ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় আপনি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি বলে মনে করি। এখন আপনার কৃতকর্মের জন্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইন আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। আপনি আইনের শাসনে বিশ্বাসী শিক্ষিত-সচেতন নাগরিক হিসেবে দায়িত্বশীলতার সাথে সেটা মোকাবেলা করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এমনকি আপনার বিরুদ্ধে চলমান শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় আপনার ও আপনার পক্ষে সম্মানিত বিবৃতিদাতাগণকে আইনি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু আপনার পক্ষ নিয়ে কখনও বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান, কখনও বিশ্বনেতারা যেভাবে বাংলাদেশকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তাতে কি আপনার সম্মান বাড়ছে- প্রশ্নটা আপনার বিবেকের কাছে রাখলাম। একজন নোবেলজয়ী বাঙালি হিসেবে আপনার কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ তাদের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে প্রত্যাশা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি একবার বুকে হাত দিয়ে বলুন, দেশের কোনো সংকটে মানুষ কি আপনাকে পাশে পেয়েছে? ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র দেশ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেও আপনার কী ভূমিকা ছিল সেটা আমরা জানতে পারিনি। আপনার ইমেজ নিয়ে আপনি কি কখনও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কিংবা বিশ্ববাসীকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন? রোহিঙ্গা সংকটে আপনার কি ভূমিকা ছিল? কোভিড-১৯ যখন সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল তখনও আমরা আপনার কোনো ভূমিকা দেখতে পাইনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে যখন বিশ্ববাসী বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল তখন বাংলাদেশের মানুষের পাশে আমরা আপনাকে দেখিনি। দেশের অভ্যন্তরীণ নানা সংকট নিয়ে আপনি কখনও এক লাইনের একটি বিবৃতি দিয়েছেন? অথচ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আপনার যে সখ্য সেটাকে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে কাজে না লাগিয়ে আপনি বাংলাদেশের মানুষের সামষ্টিক জীবনমানের উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারতেন। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের সংকট আছে, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতেও সংকট আছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু আমি মনে করি, এর সবই নিজেরা নিজেদের মধ্যে সমাধানযোগ্য। সেই সংকটকে পুঁজি করে সবসময় আপনাকে নিয়ে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের একটি কথা আলোচনায় চলে আসে। এই আলোচনা কি আপনার জন্য সম্মানের? দেশের মধ্যে ভাই-ভাই ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত তৈরি করে, মায়ের বুক খালি করে, রক্তপাতের উসকানি দিয়ে বিশ্বমোড়লদের হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করে দেয়া এবং সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতারোহণের চিন্তা কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাজ হতে পারে না। বিনয়ের সঙ্গে বলছি, আপনাকে আমরা দেশের সংকটে পাশে চাই। উন্নয়ন-অগ্রগতি, প্রগতির পক্ষে আপনার ভূমিকা প্রত্যাশা করি। সংঘাত, সংঘর্ষ, সংবিধানবহির্ভূত পন্থায় ক্ষমতারাহনের অনুঘটক নয়। আমরা বাঙালির সামগ্রিক জাগরণে, চেতনায়, মননে জাগ্রত শুদ্ধ বিবেক হিসেবে নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখতে চাই। বিশ্বের আকাশ থেকে আপনি নেমে আসুন বাঙালির মর্ত্যে, এ কামনা করি। আপনার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি।
http://dlvr.it/Sw0NCB

Post a Comment

0 Comments