Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

৬ সন্তান নিয়ে জঙ্গলে আশ্রয়

তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে জঙ্গলে বসবাস করছেন মামুন মিয়া। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের পশ্চিম পোমকাড়ার পরিত্যক্ত ঝোপই এখন ভিটেমাটিহীন পরিবারের ঠাঁই। বাঁশঝাড় ও বন্য গাছে ঘেরা ঝোপের ভেতরে মাথার উপরে কয়েক ফালি টিন তুলে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে ৮ জন মানুষ। চারদিন উন্মুক্ত ওই জায়গা ঘিরে মশা-মাছি আর পোকা-মাকড়ের আস্তানা। নোংরা পরিবেশে স্ত্রী ও ৬ শিশু সন্তান নিয়ে সেখানেই মাথা গুঁজেছেন মামুন মিয়া। নড়বড়ে টিনের ঘরে নেই কোনো চৌকি কিংবা খাট। মাটিতে ছেঁড়া পাটি ও পলিথিন বিছিয়ে প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিবেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছে পরিবারটি। মামুনের বড় ছেলে আরিফ ১০ বছর, বড় মেয়ে শারমিন ৮ বছর, সজিব ৬ বছর, মেয়ে মাহিমা ৫ বছর, ছোট মেয়ে মারিয়া ১৫ মাস এবং ছোট ছেলে আলী বাবা ১৪ দিন বয়সী। দারিদ্র্যের কষাঘাতে পরিবারের প্রতিটি সদস্যই ভয়াবহভাবে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তার ওপর নোংরা পরিবেশে মশার রাজ্যে থাকতে গিয়ে শিশুগুলো নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মামুন মিয়া বলেন, রাতে ছয় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মাটিতে একসাথে ঘুমাই। এখানে অনেক সাপ, পোকা-মাকড় আছে৷ মশারিও নেই। গরিব মানুষ, পরিবার নিয়ে কোনোরকমে দিন পার করছি। সরেজমিনে শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মাটির চুলায় কুড়ানো লাকড়িতে ডাল রান্না করছেন মামুনের স্ত্রী নিলুফা আক্তার। দুপুরের খাবার বলতে ভাত, আলু ভর্তা আর ডাল। নিলুফা আক্তার বললেন, আজকে একটা ভালো খাবারই বলতে হয়। এমন দিন যায় ছেলে-মেয়েদের পরিমাণমতো ভাতই দিতে পারি না। নুন দিয়ে ভাত খেয়েও দিন পার করছি। স্বামী মাঝেমধ্যে কাজ খুঁজে পেলে বাচ্চাগুলোর কপালে এমন খাবার জোটে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেবিদ্বারের বারেরা এলাকায় পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন হতদরিদ্র মামুন মিয়া। সেখানকার জমির মালিক নতুন ঘর তৈরি করায় তিনি বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এই ঝোপে। হতদরিদ্র মানুষটি নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, আমার বাবা একসময় বেবিট্যাক্সি চালাতেন। একটি ঘর ছিল। বাবাই সেটি বিক্রি করে দিয়ে এখন ভিক্ষাবৃত্তি করে চলেন। মা পাগল হয়ে নিরুদ্দেশ। বড় ভাই সুমন মিয়া ময়মনসিংহে শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। রিকশা চালান। আর ছোট ভাই সজল চট্টগ্রামে শ্বশুর বাড়িতে থেকে তরকারি বিক্রি করে সংসার চালান। মামুন বললেন, আমার জমি নেই, ঘর নেই। ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছি। চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভাগ্যে জোটেনি। এখন বাধ্য হয়ে ছেলেপুলেকে নিয়ে ঝোপে বাস করছি। একটি ঘর পেলে সন্তানদের নিয়ে মাথা গুঁজে থাকতে পারতাম। সুবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুকুল ভূইয়া বলেন, পরিবারের খবরটি জেনে খারাপ লাগছে। আশ্রয়ণের নতুন প্রকল্প আপাতত নেই। আমার ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশকিছু ঘর পরিত্যক্ত। যাদেরকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারা সেখানে থাকেন না শুনেছি। ইউএনও মহোদয়ের অনুমতি পেলে সেখানে পরিবারটিকে আশ্রয় দেয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
http://dlvr.it/SvYyVy

Post a Comment

0 Comments