পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া ছিনতাইকারী চক্রের চার সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।
আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের আটক করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাইকৃত টাকা, ডিবির পোশাক, ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাফ।
আটক চারজন হলেন সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার মাসুদ করিম (৫০), একই এলাকার রবিউল করিম সুলভ (৩০), পাবনা জেলার চাটমোহর থানার আব্দুল খালেক (৩৪) ও নাছির উদ্দিন (২৯)।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) জামাল সিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ব্যাংকের ভেতর থেকে টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহককে অনুসরণ করতেন ছিনতাইকারী চক্রের এক সদস্য। এরপর তার দেয়া তথ্যে চক্রটির বাকি সদস্যরা টার্গেট করা ব্যক্তিকে ডিবি পরিচয়ে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিতেন প্রাইভেট কারে। তারপর নির্যাতনের পর টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ভুক্তভোগীকে ফেলে রেখে যাওয়া হতো সড়কের পাশে।
অবশেষে ছিনতাইকারী চক্রটির চার সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আশুলিয়ার বলিভদ্র এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরা ব্যাংকের সামনে মো. ইউসুফ নামে এক গ্রাহককে মারধর করে তার কাছে থাকা চার লাখ ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ ছাড়া গত তিন মাসে সাভার ও আশুলিয়ায় আলাদা দুটি ঘটনায় ১৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে একই কায়দায়।
বলিভদ্র এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার পরিবহন কোম্পানির ম্যানেজার মো. ইউসুফ বলেন, দুপুরে চার লাখ ১৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়াই। ওই সময় একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার এসে দাঁড়িয়ে ভেতর থেকে কয়েকজন বেরিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। তারা ডিবি পুলিশের কটি, হাতে হ্যান্ডকাফ ও পিস্তল নিয়ে এসেছিল।
তখন তারা জোর করে আমাকে গাড়িতে ওঠাতে চায়, কিন্তু আমি গাড়িতে না ওঠায় আমার সঙ্গে অনেক ধস্তাধস্তিও হয়। একপর্যায়ে তারা আমার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে টাকার ব্যাগটা ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। আমি আশুলিয়া থানায় ছুটে এসে বিষয়টি জানালে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
তিনি আরও জানান, থানা পুলিশ আশুলিয়া বাজার এলাকায় ট্রাফিক পুলিশকে জানালে তারা চারাবাগ এলাকা থেকে গাড়িটি আটক করতে সক্ষম হয়। ওই সময় চার ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ, তবে ইউসুফের দুই লাখ ৬৪ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা এখনও পাননি তিনি।
পুলিশের দেয়া তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে আশুলিয়ার নবীনগরে সোনালী ব্যাংকে ৯ লাখ টাকা উত্তোলন করেন মাদ্রাসার শিক্ষক হাবিবুর রহমান। ওই সময় ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য শাহিন একটি ব্যাগ কাঁধে ব্যাংকের ভিতরে প্রবেশ করে তাকে অনুসরণ করছিলেন। শাহিন মূলত ছিনতাইকারী দলের সোর্স হিসেবে কাজ করেন। এরপর টাকা উত্তোলন করে হাবিবুর ব্যাংক থেকে বেরিয়ে নবীনগর এলাকা থেকে একটি বাসে উঠেন সাভারের উদ্দেশে। কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায় ব্যাংকে হাবিবুরকে অনুসরণ করা ব্যক্তি একই বাসে গিয়ে দৌড়ে উঠছেন।
পুলিশ আরও জানায়, বাস থেকে সাভার স্ট্যান্ডে নেমে অটোরিকশা নিয়ে রাজাসন আইচা নোয়াদ্দা এলাকায় নিজ বাসায় রওনা হন হাবিবুর। ওই সময় শাখা সড়কে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার অটোরিকশাটির গতিরোধ করে। পরে প্রাইভেটকার থেকে ডিবির পোশাক পরা দুই ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ পরিচয়ে তাকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নেয়। পরে তার কাছে থাকা ৯ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়ারপুর এলাকায় ফেলে রেখে যায় তারা।
এ ঘটনায় হাবিবুর রহমান সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেন বলে জানায় পুলিশ।
একই কায়দায় গত ২২ জুন আশুলিয়ার ডেন্ডাবর কবরস্থান রোড থেকে রোস্তম আলীকে প্রাইভেট কারে তুলে অমানুষিক নির্যাতন চালায় ছিনতাইকারীরা। পরে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা ৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা তার কাছে থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ধামরাইয়ের বাথুলি এলাকায় মহাসড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) জামাল সিকদার জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়া থানায় গিয়ে আটক চার ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করেছেন সাভারের বাসিন্দা ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান। তিন মাস আগে আশুলিয়ার কবরস্থান রোড এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার রোস্তম আলীও ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা জামাল সিকদার বলেন, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকারী চক্রের যে চার সদস্যকে আটক করা হয়েছে, তাদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক আসামিরা সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও চন্দ্রা এলাকায় ছিনতাই করার কথা স্বীকার করেছেন। তারা মূলত ব্যাংক থেকে বেশি টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকদের টার্গেট করে তাকে অনুসরণ করে ছিনতাই করেন। এ জন্য ব্যাংকে তাদের একজন সোর্স হিসেবে কাজ করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
http://dlvr.it/Sw71PY
0 Comments