যারা ক্ষমতা দখল করে তারা কখনো জনগণের ভাগ্য গড়ে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এরা শুধু নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নে ব্যস্ত থাকে। বিপরীতে জনগণের ভোটে যারা ক্ষমতায় আসে জনগণের জন্য কাজ করে।
শনিবার সকালে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর এ দেশের অগ্রযাত্রা থেমে যায়। সেদিন অস্ত্র হাতে নিয়ে বন্দুকে নলের সাহায্যে সেনা আইন লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা মানুষের ভাগ্য গড়তে আসেনি। বরং আমাদের বিজয়ী পতাকা নষ্ট করা, স্বাধীনতার চেতনাকে নষ্ট করা, আমাদের যে আদর্শ সেই আদর্শকে ধ্বংস করার জন্যই তাদের যাত্রা ছিল। নিজেরা অর্থশালী হয়েছে, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, ঋণ খেলাপির কালচার শুরু করেছিল। তারা সেনাবাহিনী-বিমানবাহিনীসহ আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মীকে হত্যা, গুম, খুন করেছিল।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা যখন স্বাধীনতা অর্জন করি তখন ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষই দরিদ্র ছিল। পরনে ছিন্ন কাপড়, পেটে খাবার নেই, চিকিৎসা নেই, শিক্ষার ব্যবস্থা নেই, চারপাশে শুধু শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতিত মানুষ। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটাকে গড়ে তুলছিলেন। মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছিলেন। কিন্তু ১৫ আগস্ট কুচক্রীরা তাকে সপরিবারে হত্যা করার পরে ২১টা বছর মানুষ কষ্ট পেয়েছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে গঠন করার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করে বলে উল্লেখ করেন দলটির প্রধান। তিনি বলেন, মাঝের কিছু বছর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসায় তা ব্যাহত হলেও আওয়ামী লীগ ২০০৮ এ সরকারে এসে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। যার ধারাবাহিকতায় সারা দেশে উন্নয়ন হয়েছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন বিএনপি-জামায়াতের চোখে পড়ে না। আসলে তারা অন্ধ। চোখের চিকিৎসায় আধুনিক চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। মাত্র ১০ টাকায় সেখানে চিকিৎসা নেয়া যায়। তাদের (বিএনপি) অনুরোধ করবো, সেখানে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার জন্য। তাদের চোখের দোষ না, এটা তাদের মনের অন্ধকার। এদের ব্যাপারে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। তারা ধ্বংস জানে, সৃষ্টি জানে না। তারা আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বাজেট দিয়ে আমাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করেছি এবং বাস্তবায়নও করেছি। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। আমদানি ব্যয় বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আছে। এজন্য সবাইকে বলবো, যতটুকু জমি আছে সেখানে কিছু না কিছু চাষাবাদ করুন। নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করুন। তাহলে আমরা স্বনির্ভর হতে পারবো।
সরকার প্রধান বলেন, আজকে রেলের সঙ্গে কক্সবাজার সংযুক্ত হলো। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেললাইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে সত্যি আমি খুব আনন্দিত। একটা কথা দিয়েছিলাম, কথাটা রাখলাম। আজকের দিনটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটা গর্বের দিন।
তিনি বলেন, কক্সবাজার এমন একটি সমুদ্র সৈকত, যেটা বিশ্বে বিরল, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। ৮০ মাইল লম্বা, সম্পূর্ণটাই বালুকাময়।
রেলে সেবার মান বাড়ানো হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, রেলে কক্সবাজার আসা যাবে, এটা অনেকের আকাঙ্ক্ষা ছিল। আমরা করে দিয়েছি। যমুনা নদীর ওপর পৃথক রেল সেতু করছি। রেলমন্ত্রীর বাড়ি পঞ্চগড়, সেখান থেকে যেন সরাসরি কক্সবাজার আসতে পারে, সে ব্যবস্থা তো করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন থেকেও যেন ট্রেনে আসা যায় তাও করবো। আমাদের পদ্মার ওপাড়ের লোকেরাও রেলে কক্সবাজার আসতে পারবেন। খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন আবার চালু করছি। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে যেন কক্সবাজার আসা-যাওয়া করা যায়, সে ব্যবস্থা করছি। রেলেও ওয়াইফাই কানেকশন দিয়ে দেবো। রেলে সেবার মান বাড়বে।
প্রতিটি সরকারি স্থাপনা যত্নের সঙ্গে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে আমরা যে কাজগুলো করেছি, সবগুলো ব্যবহারে যত্নবান হবেন। আধুনিক রেলস্টেশন করে দিয়েছি। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসে যেন দেখে যে, বাংলাদেশে উন্নত ও সুন্দর রেলস্টেশন আছে। রেল গাড়িগুলো যেন পরিষ্কার থাকে, যত্রতত্র ময়লা না হয়। নিজেদের সম্পদ মনে করে ব্যবহার করবেন।
এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন ও রেলসচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর।
http://dlvr.it/SyhTPK
0 Comments