সিসিক কাউন্সিলরসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা

সিলেট নগরের বালুচর এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী আরিফ আহমদকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় মামলা হয়েছে। মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিরন মাহমুদ নিপুসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহতের মা আঁখি বেগম বাদী হয়ে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
তিনি বলেন, খুনের ঘটনায় আগেই আটক দুজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই কাউন্সিলর হিরন মাহমুদ নিপু পলাতক বলে জানান তিনি। তবে মামলার বাকি আসামিদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সোমবার রাত ১২টার দিকে নগরের বালুচর টিবিগেট এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে কয়েক ১৯ বছরের তরুণ আরিফকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
আরিফ আহমদকে কুপিয়ে ফেলে যাওয়ার সময় দৌড়ে সেখানে গিয়েছিলেন তার মা আঁখি বেগম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার পরপরই আমি সেখানে গিয়ে দেখেছি, সাদা পাঞ্জাবি পরে হিরণ মাহমুদ নিপু মোটরসাইকেলে উঠে চলে যাচ্ছেন।
আঁখি বেগম বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় ছেলেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় হাসপাতালের পথে রওনা হই। যাওয়ার পথে ছেলে আমাকে বলেছে যে হিরণ মাহমুদ, রনি, মামুন, হেলালসহ ১৫-২০ জন মিলে ওর ওপর হামলা চালিয়েছে।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই আরিফকে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।
আরিফ পদে না থাকলেও জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি নাজমুল ইসলামের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। তিনিও এ হত্যাকাণ্ডে হিরণ মাহমুদ জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন। ঘটনার পর থেকে কয়েক দফা চেষ্টা করেও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে হিরণ মাহমুদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরিফ আহমেদের বাবা ফটিক মিয়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। কদিন ধরে অসুস্থ থাকায় বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন তিনি। ফটিক মিয়া ও আঁখি বেগম দম্পতির চার ছেলের মধ্যে আরিফ সবার বড়। তিনি টিলাগড় এলাকার স্টেট কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন।
আঁখি বেগম বালুচর এলাকার রাজা মিয়ার কলোনিতে অন্যের রান্নাবান্নার কাজ করে সংসার চালান।
ছেলেকে রাজনীতি করতে নিষেধ করেছিলেন উল্লেখ করে আঁখি বেগম বলেন, ছেলে এক বছর আগে কলেজে ওঠার পর থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করত। আমি বলেছিলাম ছাত্রলীগ না করতে। জবাবে ছেলে বলেছে, কলেজে থাকতে হলে ছাত্রলীগ করতে হয়। তা না হলে তাকে মেরে শেষ করে দেবে।
তখন তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে এইচএসসি পাস করার পর ছেলেকে আর ওই কলেজে রাখবেন না।
আরিফের ওপর কয়েক দিন আগেও হামলা হয়েছে। সে ঘটনার উল্লেখ করে আঁখি বেগম বলেন, আরিফের বন্ধুর সঙ্গে অন্যদের পূর্ববিরোধ ছিল। বন্ধুকে না পেয়ে আরিফের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় আরিফের বাঁ হাতের আঙুল কেটে গিয়েছিল।
চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পর এ ঘটনায় সোমবার শাহপরান থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। লিখিত অভিযোগ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওরা আমার ছেলেকে খুন করেছে।
সিলেটের শাহপরান থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারধরের ঘটনায় আরিফের মা আঁখি বেগমের দায়ের করা অভিযোগটি সোমবার রাতেই মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, ১৫ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে উত্তর বালুচর এলাকার ২ নম্বর মসজিদের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে আরিফের পূর্ববিরোধ ছিল। আসামি হিসেবে বালুচর এলাকার জুনেদ, আনাছ মিয়া, কুদরত আলী, কালা মামুন, শরীফ, হেলাল ও সবুজের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
শাহপরান থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, সোমবার রাতে পাওয়া অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, আরিফ হত্যার ঘটনায় আটক রনি ও মামুন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিরণ মাহমুদের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এলাকায় তারা বখাটে হিসেবে পরিচিত।
তিনি বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবেই আরিফ আহমেদকে খুন করা হয়েছে। তার শরীরে ১৬-১৭টি কোপ ও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিলো।


http://dlvr.it/Sz9jKW