কথায় আছে চারদিকে পানি, মধ্য খানে রানি। চারদিকে না থাকলেও নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানীর মেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনদিকেই রয়েছে পানি। এখানে স্কুলটি মধ্যখানে রানি হয়ে রয়েছে।
স্কুলের গা ঘেঁষে পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে ছয়টি পুকুর, নেই কোনো বাউন্ডারি ওয়াল।
উত্তরদিকে একটি বাড়ি থাকলেও বাড়ির পেছনে পুকুরের দেড় ফুট প্রশস্ত পাড় দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে এতে ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু শিক্ষার্থীরা।
প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুকাইয়া আক্তার বলে, পুকুরের মাল্লি (পাড়) দিয়ে স্কুলে আসতে খুবই ভয় করে। না জানি কখন যে পিছলে পড়ে যাই।
দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আসফিয়া মনি বলে, আমাদের স্কুলের চারদিকে পানি। স্যার-ম্যাডামরা তাই ক্লাস থেকে বের হতে দেয় না। স্কুলে কোনো খেলার মাঠও নেই।
শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবু সুফিয়ান বলেন, পুকুরের পাড় দিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না, তবুও ঝুঁকি নিয়ে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে।
অভিভাবক রেশমা বেগম বলেন, এই এলাকায় আশেপাশে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। বাচ্চা যতক্ষণ স্কুলে থাকে ততক্ষণ নানা দুশ্চিন্তা মাথায় ঘোরে। অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।
১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি জাতীয়করণ করা হয় ২০১৩ সালে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৯১ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের পাঠদানের জন্য একজন প্রধান শিক্ষক ও চারজন সহকারী শিক্ষক রয়েছে। স্কুলের জমি সংক্রান্ত মামলা আদালতে চলমান থাকার কারণে একটি ছোট ভাড়া করা জায়গায় পাঠদানের কার্যক্রম চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় ওই এলাকার সৈয়দ নেজার আলী শাহ্ ফকির, আব্দুল মান্নান শাহ ফকির, ছুলেমান আলী শাহ্ ফকির ও আব্দুল মজিদ শাহ্ ফকির ১৯৯৫ সালের ২১ জানুয়ারি স্কুলটির নামে ৩৩ শতক জমি লিখে দেন। সে অনুযায়ী বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতক জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে এবং নামজারি সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হওয়ার পর জমিদাতার উত্তরসূরি রমজান আলী শাহ্ ফকির বিদ্যালয়ে জমি দিবে না বলে আদালতে মামলা করে।
আদালতে মামলা চলার ফলে প্রায় তিন বছর ধরে পুকুরের ধারে পাঁচ শতক ভাড়া জমিতে টিনের চালা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন শিক্ষকেরা। মামলা থাকার ফলে জাতীয়করণের ১০ বছর পরেও স্কুলের ভবন নির্মাণে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাবিনা সুলতানা বলেন, বিদ্যালয়টিতে যাওয়া-আসার রাস্তা নেই। ঝুঁকি নিয়ে বাচ্চারা প্রতিদিন স্কুলে আসে। বিদ্যালয়ে চারদিকে পুকুর থাকায় আমরাও সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকি।
একটি বাচ্চার কিছু হলে তার দায়ভার কে নেবে? বিদ্যালয়ের জমি দাতারা বিদ্যালয়ের নামে জমি দিয়ে আবার জমি ফেরত নেয়ার জন্য আদালতে মামলা দিয়েছে। মামলার ফলে তিন বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি।
জমির মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে মামলার বাদী রমজান আলী শাহ্ ফকিরের সঙ্গে বাসায় গিয়ে ও ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ. এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, ওই বিদ্যালয়টির এমন অবস্থা সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুতই পরিদর্শনে যাব। বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কী মামলা চলছে, সে বিষয়ে জেনে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেব।
http://dlvr.it/SyhbMW
0 Comments