রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে টার্গেট করে করে অর্থ ও এমপি বানানোর প্রলোভনে ভূঁইফোড় কিংস পার্টিতে রাজনৈতিক নেতাদের ঢুকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। একইসঙ্গে বলা হয়েছে- কোনো নীতিবান, আদর্শবাদী, দেশপ্রেমী রাজনীতিককে তারা নিতে পারছে না।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শনিবার রাতে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কতিপয় ডিগবাজিমার্কা-ভ্রষ্টচারী রাজনীতিককে নির্বাচনি রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা বানাতে কব্জা করেছে সরকার। টাকার বিনিময়ে খরিদ হওয়া এসব রাজনীতিকের কেউ কেউ এখনই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ টাকা ও ক্ষমতার লোভে পড়ে ডিগবাজি দেয়ার পর তারা এখন বুঝতে পারছেন যে তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে না।
রিজভী বলেন, গণভবন-বঙ্গভবনে যারা ছুটোছুটি করছেন তাদের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আমার আহ্বান- অবৈধ ক্ষমতার দাপটের চেয়ে জনগণের ভালোবাসায় ধন্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানের। অতএব, নিজেদেরকে অসম্মানিত করবেন না।
বারো কোটি ভোটারের লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার আদায়ের দাবির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। দুর্নীতি-লুটপাট আর দুঃশাসনে বিপর্যস্ত দেশবাসীর চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে বেঈমানি করবেন না। সাময়িক লোভ-লাভের আশায় ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচনে অংশ নিয়ে যারা জনগণের আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন তাদের নামও রাষ্ট্রীয়ভাবে বেঈমানদের তালিকায় চিহ্নিত থাকবে।
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে নেতাদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে রাতের বাহিনী। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটছে মাফিয়া চক্র। তবে তুমুল আন্দোলন-জনজোয়ারে এই নির্বাচনী নাটক ভণ্ডুল হয়ে যাবে। জনগণ আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন দিবস উদযাপন করবে ইনশাআল্লাহ।
রিজভী বলেন, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আজ অত্যাচারী শাসকের পদতলে রাখা হয়েছে। মাফিয়া চক্র গোটা দেশকে জিম্মি করে রেখেছে।
নির্বাচনকে আজ হাসি-তামাশা, বাণিজ্য ও প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিত্ব এখন শেখ হাসিনার দান-দক্ষিণা, খয়রাত, বিলি-বণ্টন, ভাগ-বাটোয়ারা, উপহার-করুণায় পরিণত হয়েছে। ২০১৪ বিনা ভোটে অটোপাসের নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোট ডাকাতির পর এবার ইলেকশন ভাঁওতাবাজির নামে সিলেকশন করা হচ্ছে।
৭ জানুয়ারি ভোটের নামে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা হবে অত্যন্ত নিখুঁত ধূর্ততায়, জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে। ইলেকশনের দিন রাতে পাঠ করা হবে গণভবনের তৈরি করা তালিকা।
রিজভী বলেন, নির্বাচন এলে যে আনন্দ-উৎসবের জোয়ার নামে জনপদগুলোতে তার পরিবর্তে ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে সারাদেশে। যারা আওয়ামী লীগ করে তারা ছাড়া গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ। বহু গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
একতরফা নির্বাচন করতে বর্তমানে দেশব্যাপী আবারও পুলিশের পাশাপাশি আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, সরকার একদিকে বলছে নির্বাচনে আসুন অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীসহ আন্দোলনে সক্রিয় ও সাহসী নেতাদের টার্গেট করে তাদেরকেই কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে। পুরনো মামলায় সাজা দেয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে।
মোট ২৭টি মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ৪১৯ জনের বেশি নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে দুই বছরের নিচে কারও সাজা হচ্ছে না। কারণ দুই বছরের সাজা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রতিবন্ধক।
সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৩২৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৫ নভেম্বর নির্বাচনি একতরফা তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে চার হাজার দুইশ জনের বেশি নেতাকর্মীকে। আর ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মহাসমাবেশের ৪/৫ দিন আগে থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৬ হাজার ২১৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
http://dlvr.it/SzJKnP
0 Comments