আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে নৌকার মাঝি পরিবর্তন হয়েছে। জাতীয় সংসদের ৩৩তম এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ। তবে, জেলার বাকি চার আসনেই পূর্বের প্রার্থীরাই আবারও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। তাদের মধ্যে সুন্দরগঞ্জের আফরোজা বারী ছাড়া বাকি তিন আসনেই মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবেই রয়েছেন।
রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এই তালিকা প্রকাশ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আবুল কালাম আজাদ জেলার বৃহত্তম এ আসনে ২০১৪ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে মনোনয়নপ্রাপ্ত মনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৬ সালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন তিনি। একই সময়ে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এর আগে তিনি ২০০৪ সালে জাসদ নেতা থেকে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। পরে ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন আবুল কালাম আজাদ। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
কিন্তু, ২০১৬ সালে আদিবাসী সাঁওতালদের নির্যাতন-অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হত্যার ঘটনার নেতৃত্বদানের অভিযোগে দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে সমালোচিত হওয়া এবং ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ায় ২০১৮ সালে তাকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়নি বলে ধারণা তৃণমূল আওয়ামী লীগের। ২০১৮ সালের সময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এবং ২০০৮ নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে ২০১৮ সালে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। সেই সময় ওই আসনে বিএনপি প্রার্থী ছিলেন ফারুক কবির আহমেদ। কিন্তু নির্বাচনের কয়েক দিন আগে মনোনয়ন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের হলে প্রার্থিতা হারান ফারুক কবির আহমেদ। নির্বাচিত হন মনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
আসন্ন নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছিলেন আবুল কালাম আজাদ সহ ১৪ নেতা। তারা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আতাউর রহমান সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল লতিফ প্রধান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোকাদ্দেস আলী প্রধান বাদু, সেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মো. নাজমুল হাসান লিটন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইবনে আজিজ মো. নুরুল হুদা ফরহাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রধান আতাউর রহমান বাবলু, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজ, জেলা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মো. শাহজাহান আলী সরকার, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ এ কে এম আব্দুর নূর, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের ভারত সভাপতি এম এ শামীম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম প্রধান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মো. কামরুল হাসান ফাহিয়ান।
গাইবান্ধা-৫ আসনের মনোনয়ন পাওয়া অন্য প্রার্থীরা হলেন, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের মিসেস আফরুজা বারী। তিনি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রয়াত সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বড় বোন। ২০১৬ সালে সাংসদ মন্জুরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুতে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন আফরোজা বারী। সেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর কাছে হেরে যান তিনি।
গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে এমপি মাহবুব আরা বেগম গিনি। তিনি গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং টানা তিন বারের আওয়ামী লীগের এমপি।
গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে আ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুস স্মৃতি। তিনি ওই আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ড. ইউনুস আলীর মৃত্যুতে ২০২০ সালের উপ-নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হোন। এছাড়া তিনি কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে মাহামুদ হাসান রিপন এমপি। তিনি ওই আসনের আওয়ামী লীগের এমপি এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে ২০২৩ সালের উপ-নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হোন। এছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলেন।
http://dlvr.it/SzKwqL
0 Comments