বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থী মাইশা ফৌজিয়া মিম বাসচাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ক্যাম্পাস। যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও দায়ীদের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট সংলগ্ন ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা৷
সকাল ১০টায় অবরোধ করে ৮ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টায় অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। রাত ১১টার মধ্যে বাসচালক ও মালিক গ্রেপ্তার না হলে পুনরায় মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন তারা।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে মহাসড়কেই মাইশা ফৌজিয়া মিমের জানাজা আদায় করেন শিক্ষার্থীরা। জানাজায় নিহত মাইশার বাবা-মামাসহ পরিবারের লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভাগীয় কমিশনার ও বরিশালের জেলা প্রশাসক কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক ছাড়তে রাজি হননি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের দশটি দাবির একটিও পূরণ হয়নি। এখন পর্যন্ত খুনি বাসচালককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন। বাস মালিককেও হাজির করতে পারেননি তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মহাসড়ক ছাড়ব না।
অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের একজন রুবেল মোল্ল্যা বলেন, আমাদের বোন নিহত হয়েছে গতকাল। কিন্তু প্রশাসন এখন পর্যন্ত ঘাতক বাসচালককে আটক করতে পারেনি। বাস মালিককেও আনতে পারেনি। এমনকি ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থাও হয়নি।
এসব দাবি পূরণ না হওয়ায় আমরা মহাসড়ক অবরোধ করেছি। আর যেন এভাবে কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ সড়কে না ঝরে সে জন্য ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণসহ আমরা সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান চাই।
নিহত ছাত্রীর বাড়ি নেত্রকোনায়। তিনি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বড় হয়েছেন ঢাকায় মায়ের সঙ্গে মামাদের তত্ত্বাবধানে। মাইশার বাবা মোহাম্মদ আলী সবার কাছে তার সন্তানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চান এবং এই হত্যার যথাযথ বিচার দাবি করেন।
জানাজা শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, জানাজা নামাজ শেষে দুপুর ১২টার পর নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া দশ দফা দাবি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা অধিকাংশ দাবি আদায় করেছি। কিছু দাবির কাজ চলমান। শিক্ষার্থীদের আমরা আশ্বস্ত করেছি সব দাবি আমরা পূরণ করব অতি দ্রুত।
বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের করা দাবি অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছি। সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালককে আটক করতে বুধবার রাত থেকেই আমাদের পুলিশ কমিশনার তৎপর আছেন। আমরা আজ রাতের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করব। স্পিডব্রেকার দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবি আমারও দাবি। আমি গতকাল রাত থেকেই দাবিগুলো পূরণে কাজ করছি। ইতোমধ্য কিছু কাজ আমরা করেছি৷
বিআরটিএ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। সড়কে স্পিড ব্রেকার নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বাসচালক ও সহকারীকে ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। আশা করছি শিগগির তাদেরকে আটক করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি চাই না এভাবে আর কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ সড়কে ঝরুক। তার জন্য যা করার প্রয়োজন আমি করব।
জানা গেছে, ঢাকায় পারিবারিকভাবে মামাদের তত্ত্বাবধানে জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ভোলা রোডে পুলিশ বক্সের পাশে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক পার হওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলসের একটি পরিবহন মাইশাকে চাপা দেয়। শেরে বাংলা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
http://dlvr.it/TFwkpT
0 Comments