Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ভূমিহীন নন, আছপিয়ারা ‘প্রায় ২ বিঘা’ জমির মালিক

বরিশাল পুলিশ লাইনসের ফটকের সামনে বিষণ্ন মুখে বসে থাকা আছপিয়া ইসলামের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল গত দুইদিন ধরে। পুলিশের কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ হয়েও স্থায়ী ঠিকানার ভুল তথ্য দেয়ায় পুলিশ ভেরিফিকেশনের ধাপ পার করতে পারেননি এই তরুণী। তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বলেছিলেন, হিজলায় জমি নেই বলেই চাকরি হয়নি। তার এই ক্ষোভের কথা গিয়ে ঠেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত। বরিশালের জেলা প্রশাসক শুক্রবার জানান, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন আছপিয়ার চাকরি নিশ্চিত করার। এমনকি হিজলায় মেয়েটির জন্য ঘর বানিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। চাকরির বিষয়টি দেখতে জেলা পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। আর ঘর বানিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তবে নিউজবাংলা জানতে পেরেছে, ভোলার চরফ্যাশনে পৈত্রিক সূত্রে ৬৪ শতাংশ বা প্রায় দুই বিঘা জমি আছে আছপিয়াদের। আছপিয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম ভোলার চরফ্যাশনের হালিমাবাদ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মকবুল হোসেনের ছেলে। কাজের সূত্রে প্রথমে পিরোজপুরে এবং পরে বরিশালের হিজলা উপজেলায় এসে ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করেন তিনি। হিজলায় আছপিয়ার আত্মীয় আব্দুল হামিদ জানান, হিজলা উপজেলা সদরে একটি ভাড়া বাড়িতে সংসার গড়েন শফিকুল। সেখানেই জন্ম আছপিয়ার। ২০১৯ সালে শফিকুলের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে আছপিয়া ও তার পরিবার হিজলার খুন্না-গোবিন্দপুর ইউনিয়নে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। মৃত্যুর পর শফিকুলকে দাফন করা হয় ভোলার চরফ্যাশনে, পারিবারিক জমিতেই। সেখানে আছপিয়া ও তার মায়ের যাওয়া-আসাও আছে নিয়মিত। আছপিয়ার মেজো চাচা মোশাররফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, আমার ছোট ভাই শফিকুলের সরকারি চাকরি হওয়ায় প্রথমে সে পিরোজপুরে যায়। সেখানেই বিয়ে করে। এরপর বরিশালের হিজলায় ট্রান্সফার হওয়ার পর সেখানেই বসবাস শুরু করে। দুই বছর হয়েছে শফিক মারা গেছে। জমি ভাগাভাগি হওয়ার পর আছপিয়ারা চরফ্যাশনে ৬৪ শতাংশ জমি পেয়েছে। এর মধ্যে ১৪ শতাংশ বাড়ির এবং বাকিটা বিলের জমি। বিলের জমি হামিদ সরদারের কাছে বর্গা দেয়া রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাস তিনেক আগেও আছপিয়ার মা ঝর্ণা বেগম এখানে এসেছিলেন। আমাদের সঙ্গে সবসময়ই যোগাযোগ রয়েছে। বাবাকে চরফ্যাশনে দাফনের কথা স্বীকার করেছেন আছপিয়াও। চরফ্যাশনে জমি থাকা সত্ত্বেও নিজেকে ভূমিহীন কেন দাবি করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দাদা বাড়ি চরফ্যাশনে। আমি ৩/৪ বার সেখানে গিয়েছি। চরফ্যাশনে আমাদের জমি রয়েছে। তবে সেখানে আমি স্থায়ী নই। কী পরিমাণ জমি আছে তা আমি ঠিক জানি না। আছপিয়ার মা ঝর্ণা বেগমকেও একই প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, চরফ্যাশনে শ্বশুরবাড়িতে তেমন যোগাযোগ নেই আমাদের। হ্যাঁ, তিন মাস আগে গেছিলাম আমার বড় জা মারা যাওয়ায়। ওখানে জমিজমা রয়েছে, তবে তা আমরা ভোগ দখল করি না। আমি না পারলে ওখানে যাই না। আমার স্বামী ঠিকাদারি কাজ করতেন। হিজলাতেই সব কাজ করতেন। আমরাও স্থায়ী হিজলাতেই। আমার স্বামী মারা যাওয়ার আগে তার কোথায় কী জমি আছে তা আমাকে বুঝিয়ে দেননি। তাই আমি এসব কিছু জানি না। যেভাবে ভাইরাল আছপিয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব ধাপ পেরোলেও সবশেষ ধাপ পুলিশ ভেরিফিকেশনে গিয়ে আছপিয়ার হাত থেকে ছুটে যায় পুলিশ কনস্টেবলের পদ। পুলিশ লাইনসের ফটকের সামনে বুধবার সকালে বিষণ্ন মুখে অপেক্ষায় বসে থাকা আছপিয়ার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাম্পাস টাইমস নামে একটি পেজ। ওই পোস্টে বলা হয়, সব ধাপে পাস করার পরও কেন চাকরি হবে না সে প্রশ্ন করলে ডিআইজি এস এম আকতারুজ্জামান আছপিয়াকে জানান, নিজেদের জমি না থাকলে চাকরি দেয়ার আইন নেই। বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, জমি না থাকায় চাকরি হয়নি এই অভিযোগ সত্য নয়। স্থায়ী ঠিকানার তথ্য ভেরিফিকেশনে যাচাই হয়নি বলে বিধি অনুযায়ীই তার চাকরি হয়নি। ডিআইজি বলেন, আছপিয়া বরিশালে তার স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণ করতে পারছেন না। বিধি মোতাবেকই পুলিশ কাজ করবে। মেয়েটির প্রতি কষ্টবোধ থেকেই যায়। তিনি হয়তো না বুঝেই ভেরিফিকেশন ফরমে ভুল করেছেন। পুলিশ ভেরিফেকেশনের দায়িত্বে থাকা হিজলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্বাস উদ্দিন জানান, আছপিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা হিজলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাদের দাদার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়, সেখানে তাদের জমি আছে। তিনি যে তথ্য পেয়েছেন, সেগুলোই জমা দেয়া হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ইকবাল হোছাইন বলেন, চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী যে জেলা থেকে নিয়োগ পরীক্ষা দেবেন, সে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। আছপিয়ার ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও নির্বাচন পদ্ধতির ৪.৬ নম্বর পয়েন্টে উল্লেখ আছে, ভেরিফিকেশনের ফরমে তথ্য গোপন বা মিথ্যা তথ্য দিলে পরের ধাপে আবেদনকারীকে নেয়া হবে না। এদিকে, জেলা প্রশাসক (ডিসি) জসীম উদ্দির হায়দার নিউজবাংলাকে বলেন, আছপিয়ার বিষয়টি ওয়াকিবহাল রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জমিসহ ঘর নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে হিজলা উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নে আছপিয়ার পরিবার যেখানে থাকে, সেখানেই খাস জমি খোঁজ করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। পুলিশ বিভাগকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে আছপিয়ার চাকরি নিশ্চিত করার জন্য। তবে এসপি মারুফ জানান, চাকরি নিশ্চিত সংক্রান্ত কোনো চিঠি বা নির্দেশনা তিনি পাননি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, আমরা তো আছপিয়াকে বাদ দিইনি, কিন্তু ও ভাবছে ওকে বাদ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, এখনও অনেক কিছু বাকি।
http://dlvr.it/SF75sg

Post a Comment

0 Comments