আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে তাকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে করা আবেদনের শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ শুনানি করেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুনানির এক পর্যায়ে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি ব্যুরোকে (এনএবি) এক ঘণ্টার মধ্যে ইমরান খানকে আদালেত হাজির করার নির্দেশ দেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ইমরান খানকে আদালতে হাজির করার পর শুনানি শেষে আদালত তাকে নিঃশর্ত মুক্তির আদেশ দেন।
এসময় পিটিআই প্রধানকে গ্রেপ্তারের পর দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য ইমরান খানকে দায়ী করে আদালত। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাকে গ্রেপ্তারের পর থেকে পিটিআইয়ের সমর্থকরা দেশজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ইমরান খান আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, গত দুদিন ধরে বাইরে কী হচ্ছে, তার কিছুই আমি জানতাম না। আমার আইনজীবীর মাধ্যমে আজকে তা জানতে পেরেছি।
শান্তি বজায় রাখতে এসময় তিনি পিটিআইয়ের সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান।
নিজের প্রতি অন্যায় হয়েছে জানিয়ে ইমরান খান বলেন, আমার সাথে যে আচরণ করা হয়েছে, তা একজন খুনির সাথেও করা হয় না। আমাকে এমনভাবে গ্রেপ্তার করা হয় যেন আমি একজন জঙ্গী।
এ সময় আমরা দেশে শুধু নির্বাচন চাই বলে জানান তিনি।
এর আগে একাধিক মামলায় হাজিরা দিতে ৯ মে ইসলামাবাদের একটি আদালতে যান ইমরান খান। সে সময় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আধা-সামরিক বাহিনীর সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)।
এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাওয়ালপিন্ডির গ্যারিসন এলাকায় এনএবির হেফাজতে নেয়া হয়।
ইমরান খানের আইনজীবী এই গ্রেপ্তারকে বেআইনি বলে উল্লেখ করলেও ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তাকে গ্রেপ্তার আইনগতভাবে বৈধ বলে উল্লেখ করে। পরে তার আইনজীবী হাইকোর্টের এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করলেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।
ইমরানের গ্রেপ্তারের পরপরই মঙ্গলবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।
ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বুধবার দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেয় তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
ডন-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইমরান খানের বিরুদ্ধে করা মামলা মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে ফ্যাসিজম প্রতিরোধে জনগণকে রাস্তায় নেমে এসে ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানান পিটিআইয়ের শীর্ষ নেতারা।
গত দুদিনে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পিটিআই সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ৮ জন নিহত ও ২৯০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় প্রায় দুই হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে দেশটির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখাওয়া ও ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েন করা হয়।
এ ঘটনায় ৯ মে দিনটিকে কালো অধ্যায় আখ্যা দিয়েছে পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর)। তারা বলেছে, পাকিস্তানের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
http://dlvr.it/SntNYP
0 Comments