Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

প্লাস্টিকের জারে দেদারসে চলছে দুধ পরিবহন, মান সংরক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন

শুধু একবার নয়, ব্যবহারের অনুপোযগী হওয়ার আগ পর্যন্ত এক প্লাস্টিকের জার ধুয়ে মুছে মাসের পর মাস ধরে চলে দুধ পরিবহনের কাজ। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন বাড়ি ও ডেইরি ফার্ম থেকে এসব জারে করে দুগ্ধজাত খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসছে দুধ। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও পৌর শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চিজ (পনির) ও ঘি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ইজিবাইক, ভ্যান, রিকশা, সাইকেল ও মোটরসাইকেলে বেঁধে নিয়ে আসা হচ্ছে প্লাস্টিকের জারভর্তি দুধ। কোনো কোনো কারখানায় সেসব দুধ দীর্ঘক্ষণ ধরে সংরক্ষণ করা হচ্ছে ফ্রিজে। স্বাস্থ্য বিভাগ ঠাকুরগাঁওয়ের স্যানেটারি কর্মকর্তাদের দাবি, দুধ সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য প্লাস্টিকের জার ব্যবহারের কারণে দুধের গুণগত মান নষ্ট হয়। এ কথা জানা সত্ত্বেও, বারবার এ বিষয়ে সচেতন করার পরও ফুড গ্রেডের অ্যালুমিনিয়ামের জার ব্যবহার করছেন না গোয়ালা পেশাজীবী ও দুধ দিয়ে খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিষয়ে গোয়ালা ও প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের দাবি, যুগ যুগ ধরে এভাবেই দুধ বহন করে আসছেন তারা। এতে দুধের গুণগতমান নষ্ট হয় না। আগুনে জাল দিলেই দুধ ঠিক হয়ে যায়। দাম বেশি হওয়ায় অ্যালুমিনিয়ামের জার কিনতে পারেন না বলে দাবি তাদের। পৌর শহরের শিমুলতলী এলাকার চিজ ও ঘি উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, আমি গোয়ালা দিয়ে দুধ সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন ধরে চিজ ও ঘি উৎপাদন করে আসছি। কখনও কোনো সমস্যা হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অ্যালুমিনিয়ামের জার ব্যবহারের কথা বলছেন। কিন্তু ৪০ লিটারের একটি জার কিনতে গেলে ৯ হাজার টাকা দরকার। চিজ উৎপাদনে খরচও অনেক। সে তুলনায় লাভ না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান জাকির হোসেন। বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তো কোথাও থেকে কোনো সহযোগিতা পাই না। কারখানায় হাজার হাজার লিটার দুধ লাগে। কতগুলো জার কিনব? এত টাকা কই? প্লাস্টিকে না পোষালে ব্যবসা বন্ধ করে আমাদের ঘরে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। সনাতনি পদ্ধতিতে এভাবেই দিনের পর দিন দুধ উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাস্টিকের পাত্র। ছবি: নিউজবাংলা আরেকটি চিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আব্দুল হান্নান বলেন, এক কেজি চিজ উৎপাদনে ৫০০ টাকার বেশি উৎপাদন খরচ হয়। কিন্তু ওই পরিমাণ চিজে আমরা ২০-৩০ টাকাও লাভ করতে পারি না। সব মিলিয়ে এ প্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচাতে হলে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, আমরা কারখানার জন্য গোয়ালের থেকে দুধ সংগ্রহ করে থাকি। তারা প্লাস্টিকের জারে করেই দুধের যোগান দেন। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে জেলাতে ১২টি চিজ ও ঘি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আখতার ফারুক বলেন, আমরা কারখানাগুলোতে গিয়ে গোয়ালা ও মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। তাদেরকে আমরা জানিয়েছি যে, প্লাস্টিকের জারে দুধ বহন করলে দুধের গুণগত মান নষ্ট হয়। এর জন্য ফুড গ্রেডের অ্যালুমিনিয়ামের জার ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু তারা কথা শোনেন না। তবে এমন চলতে থাকলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব- সে কথাও তাদের জানানো হয়েছে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. রাকিবুল হাসান বলেন, সম্প্রতি তীব্র তাপদাহ ও ভ্যাপসা গরমে হাসপাতালে খাদ্যবাহী রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্লাস্টিকের অস্বাস্থ্যকর জারে দুধ বহন করলে বা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলে দুধের গুণগত মান নষ্ট হয়। এ কারণে এসব দুধ দিয়ে উৎপাদিত খাবার থেকে যে কোনো খাদ্যবাহী রোগ হতে পারে। একটু সচেতন হলে এসব রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব। ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন নুর নেওয়াজ আহম্মেদ বলেন, প্লাস্টিকের জারে দুধ বহন করে সঙ্গে সঙ্গে যদি তা দিয়ে খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়, তাহলে তেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে যদি প্লাস্টিকের জারে করে ফ্রিজে বা অন্য কোনো উপায়ে একমাস বা তারও বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে সে দুধ শুধু গুণগত মান হারায় না, বরং তা খেলে প্রচুর স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকে।
http://dlvr.it/Svj5rl

Post a Comment

0 Comments