দীর্ঘ ৬ দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড মরক্কোর মধ্যাঞ্চল। প্রাণঘাতী এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর তৈরি হয়েছে আরেক অনিশ্চয়তা। স্বজন ও আশ্রয়হারা মানুষগুলোর দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে।
৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে শুক্রবার রাতে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১২২ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে আড়াই হাজারের মতো মানুষ, যাদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজারের অবস্থাই গুরুতর।
অ্যামিজমিজ শহরে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য একটি পরিবার ভ্যানে জিনিসপত্র প্যাক করছে। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের অনুমান, এই ভূমিকম্পে তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে- ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল আল হাউজ প্রদেশের ইঘিল শহরের কাছে, মারাকেশ শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে।
উচ্চ এটলাস পর্বতমালায় অবস্থিত মনোরম গ্রাম এবং উপত্যকার জন্য এই অঞ্চলটি ব্যাপকভাবে পরিচিত।
আমিজমিজ শহরে ভূমিকম্পে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া একটি পরিবার।
শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। ভূমিকম্পটির ১৯ মিনিট পর আবারও ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পে অনেকেই ঘর হারিয়েছেন। অনেক ঘর ধসে না পড়লেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার অনেকে আফটার-শকের ভয়ে মারাকেশের রাস্তায় বা মৌলে ব্রাহিমের মতো কঠিন-বিধ্বস্ত অ্যাটলাস মাউন্টেন শহরে অস্থায়ী ছাউনির নিচে রাত কাটাচ্ছেন। গত চারদিনেও তারা ঘরে ফিরে যাননি।
বিশেষ করে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মারাকেশ, হাউজ, অ্যাটলাস পর্বতমালা এলাকার বহু মানুষই আবার ভূমিকম্প হওয়ার ভয়ে নিজেদের ঘরে ফিরে যায়নি। তাদের দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে।
ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকায় তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বাস্তুচ্যুত লোকদের আশ্রয় দেয়ার জন্য তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে।
অ্যাটলাস ও অ্যামিজমিজে- উভয় শহরের বাসিন্দারাই নিজেদের এই দুরবস্থার মাঝেও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন দূর অঞ্চলে থাকা স্বজনদের কথা ভেবে।
অ্যাটলাস পর্বতমালার মতো মরক্কোর আরও অনেক অঞ্চলেই জরুরি সেবা পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
বিশেষত প্রত্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় গ্রামবাসী হাত দিয়ে বা তাদের কাছে থাকা বেলচা, শাবল দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আটকে পড়া মানুষ উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কিছুক্ষণ পর ওই বেলচা আর শাবল দিয়েই মরদেহ দাফনের জন্য কবরও খুঁড়তে হচ্ছে তাদের।
ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ।
বিবিসিকে এরকম একটি গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, মানুষের কাছে আর কিছুই বাকি নেই। গ্রামে কোনও খাবার নেই, শিশুরা পানির পিপাসায় কষ্ট পাচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে মানুষগুলো ক্ষুধা আর পিপাসায় তড়পাচ্ছে।
মারাকেশ থেকে ৫৫ কিলোমিটারের দক্ষিণের পাহাড়ি শহর আমিজমিজের প্রায় পুরোটাই মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
স্থানীয় হাসপাতাল ভবনটিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ভবনের ভেতরে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ায় হাসপাতালের সামনে মাঠে তাঁবু খাটিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে আহতদের।
আমিজমিজ শহরের কেন্দ্রে ঢালাওভাবে পাটি বিছিয়ে টানা তিন রাত কাটিয়ে দিয়েছে শত শত মানুষ। আবারও ভূমিকম্প হতে পারে, এমন আশঙ্কায় তারা ঘরে ফিরতে পারছে না।
আমিজমিজ শহর ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ।
মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ ভূমিকম্পের পরদিন শনিবার দেশটিতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। সেনাবাহিনী যেন উদ্ধার কাজে এবং জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে, সেই নির্দেশও দেন তিনি।
তারপরও দেশটির বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে অ্যাটলাস পর্বতমালা অঞ্চলের অনেক গ্রামে, জরুরি সেবা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছেন সাধারণ মানুষ।
http://dlvr.it/Svx9NQ
0 Comments