Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মোবাইল চুরি: চক্রের টার্গেট জানাজা ও জুমার নামাজ

চোর চক্র তাদের কার্যসিদ্ধির জন্য বরাবরই ভিড়ে ভিড়াক্কার পরিবেশ-পরিস্থিতিকে বেছে নিয়ে থাকে। সেটা হতে বাস-রেল স্টেশন, লঞ্চ ঘাট, বিপণি বিতান বা উপচে পড়া যাত্রী নিয়ে চলা বাস। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মুসল্লির ভিড় টার্গেট করে তৎপর এই অপরাধী চক্র। এমনই এক চক্রের ৯ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। ওরা জানাজা ও জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়া মুসল্লিদের টার্গেট করে তাদের মোবাইল চুরি করে সটকে পড়তো। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বাহাউদ্দিন হোসেন মিজি ওরফে বাহার, রমজান আলী, হামিম আহমেদ ওরফে হামিম, আতিকুল ইসলাম, পারভেজ হাসান, মাসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ, সাইফুল ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ রনি ও মিল্লাত হোসেন। এদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। রাজধানীর চানখাঁরপুল, জুরাইন বিক্রমপুর প্লাজা ও বুড়িগঙ্গা সেতু মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্কসহ কয়েকটি এলাকায় বুধবার অভিযান চালিয়ে এদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে তিনটি ল্যাপটপ, একটি মনিটর, একটি রেডমি নোট-১২ প্রোসহ ৭টি মোবাইল ফোন সেট, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ সামগ্রী এবং মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত ১৬টি ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। রাজধানীর বারিধারায় এটিইউ প্রধান কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির পুলিশ সুপার (অপারেশন) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, ওয়াজ মাহফিল ও জানাজার নামাজসহ জনসমাগমস্থল থেকে মোবাইল ফোন চুরি করে। এরপর চোরাই মোবাইল সেটের আইএমইআই পরিবর্তন করে কেনা-বেচা করে থাকে। চক্রটির সদস্যরা অনলাইনের মাধ্যমে খুঁজতে থাকে ঢাকা ও আশপাশে কোনো জানাজা নামাজের আয়োজন আছে কিনা। সন্ধান পাওয়ার পর ওরা খোঁজখবর করে ওই জামাতে মুসল্লির সমাগম কেমন হতে পারে। ওরা এই কাজের কোড নাম হিসেবে ব্যবহার করে বডি কাজ। জানাজার স্থান নির্ধারণ হওয়ার পর চক্রের সদস্যরা পাজামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরে সেখানে গিয়ে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। প্রতিটি গ্রুপে তিনজন করে সদস্য থাকে। উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, পেনড্রাইভ ও নগদ টাকা। ছবি: নিউজবাংলা ছানোয়ার হোসেন বলেন, এই গ্রুপের সদস্যরা জানাজার ভিড়ের মধ্যে কৌশলে একজনের পকেট থেকে মোবাইল ফোন চুরি করে গ্রুপের দ্বিতীয় সদস্যকে দেয়। দ্বিতীয় সদস্য সেটি আবার তৃতীয় আরেকজনকে দেয়। মোবাইল হাতে পাওয়ার পরপরই তৃতীয় ব্যক্তি জানাজার স্থান ছেড়ে সটকে পড়ে। পকেট থেকে মোবাইল ফোন সেট যে চুরি করে তাকে বলা হয় মহাজন। পুলিশ সুপার বলেন, জানাজা ছাড়াও চক্রটির টার্গেট থাকে জুমার নামাজ। বেশি মুসল্লির আগমন ঘটে এমন মসজিদগুলোতে চক্রটির সদস্যরা তিনজনের গ্রুপ করে অবস্থান নেয়। জুমার নামাজের কাতারে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে একই কায়দায় মোবাইল ফোন চুরি করে ওরা। মসজিদের এই চুরিকে ওরা মসজিদ কাম বলে থাকে। জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে চক্রটির সবচেয়ে বেশি গ্রুপ সক্রিয় থাকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে। তিনি বলেন, চক্রের সদস্য বাহার গ্রুপগুলো থেকে চোরাই মোবাইল সেট সংগ্রহ করতেন। বাহারের একজন মোটরসাইকেল চালক আছে। বাহারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি গ্রুপগুলো থেকে মোবাইল সেট সংগ্রহ করেন। বাহার পরে সেগুলো মাসুদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। আর মাসুদের কাজ হচ্ছে চোরাই মোবাইল সেটগুলো নির্দিষ্ট দোকানে পৌঁছে দেয়া। এটিইউর এই কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে তিনটি দোকানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যেগুলোতে এই চক্র চোরাইল মোবাইল সেট পৌঁছে দিয়ে থাকে। সেগুলো হলো- জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজার এসআই টেলিকম, যার মালিক গ্রেপ্তার হওয়া সাইফুল; জুরাইনের সেতু মার্কেটের ফয়সাল টেলিকম, যার মালিক গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সাল এবং যমুনা ফিউচার পার্কের চতুর্থ তলার একটি দোকান, যার মালিক গ্রেপ্তার হওয়া মিল্লাত। এসব দোকানে মোবাইল সেট মেরামত ও বিক্রির কাজ চলে। দোকানে আসার পর প্রথমেই মোবাইল সেটগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা হয়। তার পরের কাজ সেটগুলোর প্যাটার্ন লক খোলা। সবশেষ ধাপে ল্যাপটপের মাধ্যমে ফ্লাশ দিয়ে মোবাইল সেটগুলো বিক্রি করা হয়।
http://dlvr.it/Sw5lFM

Post a Comment

0 Comments