মানিলন্ডারিং অর্থাৎ অবৈধ উপায়ে বিদেশে টাকা পাচার- যে কোনো দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই দুশ্চিন্তা আরও বেশি থাকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে। এতে একদিকে অর্থ বিদেশে চলে যায়, অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে চাপের মুখে পড়ে।
বিগত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় অর্থ পাচার। কী করে এটা বন্ধ করা যায় তা নিয়েও চলেছে বিস্তর আলোচনা।
কানাডার বেগমপাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কর ছাড় দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এমনকি দেশে কেউ অর্থ ফিরিয়ে আনলে তাদেরকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না বলেও ঘোষণা দেন তিনি। এতোসবের পরও পাচার হওয়া অর্থ দেশে আসার নজির তেমন একটা দেখা যায়নি।
এমনই বাস্তবতায় এবার দেশ থেকে অর্থ পাচার কমার কথা জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক গবেষণা সংস্থা দ্য ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অন গভর্ন্যান্স।
সংস্থাটি তাদের অ্যান্টি মানিলন্ডারিং-এএমএল ইনডেক্স-২০২৩ প্রকাশ করে জানিয়েছে, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের পাঁচ ধাপ উন্নতি হয়েছে। এই খবর অবশ্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ পাঁচটি দেশকে পেছনে ফেলে অবস্থানের উন্নতি ঘটিয়েছে। অর্থ পাচার ও মানিলন্ডারিংয়ে দেশটি বর্তমানে ৪১ থেকে ৪৬ নম্বরে অবস্থান করছে। অবশ্য ২০২২ সালেও বাংলাদেশ সূচকটিতে আট ধাপ অগ্রগতি লাভ করেছিলো। অর্থাৎ পর পর দুই বছরে বাংলাদেশ ১৩ ধাপ এগিয়েছে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ইনডেক্সে।
সূচকে দেখা যায়, মানিলন্ডারিংয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে ক্যারিবীয় দ্বীপ দেশ হাইতি। দেশটি ইনডেক্সে সবার উপরে অবস্থান করছে। এরপর দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে চাদ, মিয়ানমার ও কঙ্গো।
অন্যদিকে তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ আইসল্যান্ড। দেশটি ব্যাসেল ইনডেক্সে ১৫২-তে অবস্থান করছে। আর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য রয়েছে যথাক্রমে ১১৯ ও ১৪০তম অবস্থানে।
তালিকায় বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে চীন। মানিলন্ডারিং ইনডেক্সে দেশটি অবস্থান করছে ২৭তম অবস্থানে। এছাড়া তালিকায় পাকিস্তান ও শ্রীলংকার অবস্থান যথাক্রমে ৬১ ও ৬২তম।
ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অন গভর্ন্যান্স বিশ্বের ১৫২টি দেশের মানিলন্ডালিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি নিরূপণ করে এই তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকা তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের তথ্য ব্যবহার করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সূচকে উন্নয়নের কারণ হিসেবে আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কাঠামোর মানোন্নয়নের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয় বৃদ্ধি, আর্থিক খাতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এ খাতে সরকারের লোকবল বৃদ্ধি ও অর্থের সংস্থান ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অন গভর্ন্যান্স বিগত ১২ বছর ধরে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এই রিপোর্ট করে আসছে। এর মধ্যে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ওপর ৬৫ শতাংশ, ঘুষ ও দুর্নীতির ওপর ১০ শতাংশ, আর্থিক স্বচ্ছতা মানদণ্ডে ১০ শতাংশ, স্বচ্ছতা ও জবাবদইহতা নিশ্চিতে ৫ শতাংশ এবং আইনগত ও রাজনৈতিক ঝুঁকির ওপর ১০ শতাংশ।
http://dlvr.it/Sz4YRS
0 Comments