মেহেরপুরের কৃষি নির্ভর এলাকাগুলোতে অল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা পাওয়ায় ডালজাতীয় শস্য কলাই এখন অর্থকরী ও লাভজনক ফসল হিসেবে চাষীদের কাছে আগ্রহের জায়গা করে নিয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে কলাই চাষের জন্য আবহাওয়া উপযোগি থাকায় ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি। যার ফলে বাম্পার ফলন পেয়েছে। তাছাড়া বতর্মান বাজারে কলাইয়ের দামও ভালো।
অল্প সময়, পরিশ্রম ও খরচের অধিক লাভ পাওয়ায় কলাইকে স্থানীয় কৃষকরা ফাও ফসল হিসেবেই আখ্যায়িত করছেন।
মেহেরপুরের কলাই চাষি, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া ছিলো কালাই চাষের জন্য বেশ উপযোগিতা। তবে কালাই গাছে ফুল আসার সময় পোকার ব্যাপক আক্রমণ ছিলো। তবে সেই পোকার আক্রমণে ফলনের উপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। বতর্মানে কেবল নতুন কলাই বাজারে উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাজারে সর্বস্তরের মানুষের কাছে ডাল ফসলের মধ্যে জনপ্রিয় কলাই।
শুধু ডালের জন্যই নয়, কলাই দিয়ে তৈরি হয় শীতের পিঠা, কুমড়োবড়িসহ নানা ঐতিহ্যবাহী খাবার। কলাই রুটি শীতের সময় দেশের বিভিন্ন এলাকাতে ঐতিহ্যবাহী খাবার। এ বছর কলাইয়ের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে মণ প্রতি ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গাংনী উপজেলার কৃষক তহিদুল হক বলেন, কলাই চাষ করা তুলনামূলকভাবে অন্য যেকোনো চাষের চেয়ে সহজ। আমার এ বছর দুই বিঘা কলাই ছিলো। সব মিলিয়ে গড়ে বিঘা প্রতি ছয় মণ করে ফলন পেয়েছি অথচ গত বছর এই জমিতেই সাড়ে তিন মণ করে কলাই পেয়েছি। আবার এই বছর দামও বেশি।
একই এলাকার আরেক কলাই চাষি একরামুল হোসেন বলেন, আমি সপ্তাহখানেক আগে কলাই মাড়াই শেষে ঘরে তুলেছি। এবার আমার এক বিঘা কালাইয়ের আবাদ ছিলো। চাষ থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা। সেখানে ফলন পেয়েছি প্রায় ৭ মন। যার বাজার মূল্য ৩০ হাজার টাকা। খরচের হিসেবে এর চেয়ে কম খরচে বেশি লাভ করা ফসল আর নেই।
কালাই ব্যাবসায়ী শফি আহমেদ বলেন, বাজারে সবে মাত্র নতুন কালাই আসতে শুরু করেছে। বতর্মান বাজার একটু বেশি। আমরা চাষিদের কাছ থেকে ভালো মানের কালাই গুলো ৪ হাজার দুইশত টাকা করে মণ। আর এভারেজ কালাই ৪ হাজার একশত টাকা করে মণ কিনছি। আর খুচরা গড়ে ৪ হাজার দুইশত টাকা থেকে ৪ হাজার তিনশত টাকা করে বিক্রি করছি।
মেহেরপুর জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মো. সামসুল আলম বলেন, ডাল জাতীয় চাষ কলাই মেহেরপুরে বেশ জনপ্রিয়। অধিকাংশ চাষিই জমি ফেলে না রেখে কলাইয়ের আবাদ করে। এতে জমি উর্বরের পাশাপাশি ভালো ফলন পাওয়া যায়। শীতকাল শুরু হলেই জেলায় কলাইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। বিশেষ করে কুমড়োবড়ি, কলাই রুটি ও ডালের জন্য এর চাহিদা বেশি। চলতি মৌসুমে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে কলাই চাষ হয়েছে।
http://dlvr.it/SypYJJ
0 Comments