দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসন থেকে লড়ছেন ৩৬ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সব কয়টি আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নিজের টাকায় নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর অন্য দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই নির্বাচনি ব্যয় জোগাড় করছেন ধার-দেনা করে।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট যাচাই করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খুলনা -১ আসনের এবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন চারজন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ননী গোপাল মণ্ডল ব্যয় করছেন ২৫ লাখ টাকা। নিজের উপার্জন করা টাকা তিনি নির্বাচনে খরচ করবেন। তিনি বলেন, আমার মূল ব্যয় হচ্ছে প্রচার প্রচারণায়। আমার কৃষি খাত থেকে যে আয় হয়, সেট টাকাই নির্বাচনে ব্যয় করব।
ওই আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী কাজী হাসানুর রশিদ ব্যয় করছেন ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে নিজের ব্যবসার ৩ লাখ ও বাকি দুই স্বজনের কাছ থেকে ধার নিবেন ২০ লাখ টাকা। তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের প্রার্থী চন্দ্র প্রামানিক ব্যয় করবেন ৩ লাখ টাকা। এই টাকা তার আইন পেশা থেকে প্রাপ্ত। তবে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায়ের নির্বাচনি ব্যয়ের তথ্য ইসির ওয়েব সাইটে পাওয়া যায়নি।
খুলনা-২ আসন থেকে লড়ছেন ছয়জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী সেখ সালাহউদ্দিন ২৫ লাখ টাকা নির্বাচনে ব্যয় করবেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে নিজের গচ্ছিত অর্থ থেকে ব্যয় করছি। কোনো ধার-দেনা করা লাগছে না।
আসনটির জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের মো. গাউসুল আজম ব্যয় করবেন ২০ লাখ টাক। তিনি বলেন, নিজের ৫ লাখ, ভাই-বোন ও মামার কাছ থেকে ৫ লাখ ও দলীয় এক শুভাকাঙক্ষীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ধার নিয়ে নির্বাচনে ব্যয় করছি।
এ ছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের দেবদাস সরকার ব্যয় করবেন ১০ লাখ। যার মধ্যে নিজের ৩ লাখ ও বাকি ৭ লাখ ধার করা। সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটে (মুক্তিজোট) ছড়ি প্রতীকের বাবু কুমার রায় ব্যয় করবেন ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ৭০০ টাকা। যার মধ্যে ১০ লাখ ১১ হাজার ৭০০ টাকা নিজের চাকরি থেকে বাকিটা ধার করা।
বিএনএমর নোঙরের প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন ব্যয় করবেন ২৪ লাখ ৫০ হাজার, যার মধ্যে নিজের আছে ৪ লাখ ৫০ হাজার, বাকিটা ধার করা। এছাড়াও ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমান ব্যয় করবেন নিজের গচ্ছিত ১ লাখ টাকা।
খুলনা-৩ আসন থেকে লড়ছেন ৪ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম কামাল হোসেন ব্যয় করবেন ২৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯০ টাকা। তিনি বলেন, নিজের ব্যবসায় আয় থেকে পাওয়া অর্থ ব্যয় করছি। কোন ধার দেনা করা লাগছে না।
ওই আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ব্যয় করবেন ১২ লাখ টাকা, এর মধ্যে ১০ লাখ ধার করা। জাকের পার্টির গোলাপ ফুলের এসএম সাব্বির হোসেন ব্যয় করবেন ৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, যার মধ্যে নিজের আছে মাত্র ৮০ হাজার, বাকিটা ধার করা। ঈগল প্রতীক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী ব্যয় করবেন ১৬ লাখ ৬০ হাজার, যার মধ্যে ধার করা ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
খুলনা-৪ আসনে লড়ছেন ১১ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী ব্যয় করবেন ২৫ লাখ টাকা। তিনি বলেন, নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ থেকে নির্বাচনের ব্যয় বহন করছি। আমার কোনো অর্থ ধার করা লাগছে না।
তবে ওই আসনের জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. ফরহাদ আহমেদ ব্যব করবেন ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যার মধ্যে ১৯ লাখই ধার করা। তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের শেখ হাবিবুর রহমান ব্যয় করবেন ২৫ লাখ টাকা, যার মধ্যে ১০ লাখ ধার করা। বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাবের মনিরা সুলতানা ব্যয় করবেন নিজের ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত ১ লাখ ৮০ হাজার। ইসলামী ঐক্যজোটের মিনারের রিয়াজ উদ্দীন খান ব্যয় করবেন নিজের ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত ৩০ লাখ টাকা।
বিএনএম প্রার্থী নোঙর প্রতীকের এস এম আজমল হোসেন ব্যয় করবেন নিজের আয় করা ২৫ লাখ টাকা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ট্রাক প্রতীকে মো. জুয়েল রানা ব্যয় করবেন নিজের আয় করা ৬ লাখ টাকা, সোফা প্রতীকে এমডি এহসানুল হক ব্যয় করবেন ৩ লাখ ৯০ হাজার, যার নিজের মাত্র ৫০ হাজার টাকা।
ঈগল প্রতীকে মো. রেজভী আলম ব্যয় করবেন ২৫ লাখ, যার মধ্যে নিজের মাত্র ১০ লাখ টাকা রয়েছে। তবে কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোত্তজা রশিদী দারা ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতীকের প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নির্বাচনি ব্যয়ের তথ্য ওয়েব সাইটে পাওয়া যাইনি।
খুলনার-৫ আসনে লড়ছেন ৪ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ব্যয় করবেন ২৫ লাখ টাকা। তিনি বলেন, নিজের উপার্জন করা জমাকৃত অর্থ থেকে নির্বাচনি ব্যয় করব। কোনো অর্থ ধার করা লাগছে না।
তবে জাতীয় পাটির লাঙ্গলের মো. শাহীদ আলম ব্যয় করবেন ৬ লাখ টাকা, যার মধ্যে ধার করা ৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ী প্রতীকের শেখ সেলিম আকতার ব্যয় করবেন ১০ লাখ টাকা, যার মধ্যে ধার করা ৬ লাখ টাকা। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেনের নির্বাচনি ব্যয়ের তথ্য ওয়েব সাইটে পাওয়া যায়নি।
খুলনা-৬ আসনে লড়ছেন ৭ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান ব্যয় করবেন সাড়ে ১৭ লাখ, যার মধ্যে নিজের মাত্র ২ লাখ। তিনি বলেন, আমার তেমন কোন অর্থ নেই। ধার করে শোধ করারও উপায় নেই। তাই দান হিসেবে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে নির্বাচনে ব্যয় করছি।
ওই আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের মো. শফিকুল ইসলাম মধু নিজের আয় করা সাড়ে ২২ লাখ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতীকের মো. আবু সুফিয়ান ব্যয় করবেন নিজের ব্যয় করার মত কোনো অর্থ নেই। তিনি ৭ লাখ টাকা ধার ও ৭ লাখ টাকা দান হিসেবে নিয়ে ব্যয় করবেন। বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের প্রার্থী মির্জা গোলাম আজম ব্যয় করবেন ১২ লাখ, এর মধ্যে নিজের আছে মাত্র ৩ লাখ।
বিএনএম প্রার্থী নোঙরের এস এম নেওয়াজ মোরশেদ নিজের আইন পেশা থেকে আয় করা ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করবেন । তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের মো. নাদির উদ্দিন খান ব্যয় করবেন ২০ লাখ, যার মধ্যে ,ধার করা ১২ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের জি এম মাহবুবুল আলম ব্যয় করবেন ২৫ লাখ, এর মধ্যে নিজের রয়েছে ৭ লাখ, ধার করা ১৬ লাখ ও দানে পাওয়া ২ লাখ টাকা।
খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, কোনো প্রার্থী যদি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে নিয়ম মোতাবেক অর্থ ব্যয় করতে কোনো বাধা নেই। আমরা প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয় নিয়মিত মনিটরিং করছি।
http://dlvr.it/T0gwLv
0 Comments