Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পাথরে ফুটেছে ফুল

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের বীরকুলী গ্রামের বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম আগে পাথর ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। উপজেলার জাফলং কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন করে বিক্রি করতেন। কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারির পর বেকার হয়ে পড়েন তিনি। আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে পড়েন বিপাকে।
পরবর্তীতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে নিজের পতিত জমিতে শুরু করেন সরিষা চাষ। এতে মিলেছে সাফল্যও। পাথরের ওপর নির্ভরতাও কমে এসেছে।
ফখরুল বলেন, কৃষি বিভাগের উৎসাহে এ বছর ৬৬ শতক জমিতে সরিষা চাষ করেছি। প্রথমবার সফলতা অর্জন করায় দ্বিতীয়বারের মতো সরিষা চাষ করতে আগ্রহী হই। আমাকে দেখে এলাকার অনেকেই সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যে বিপদে পড়েছিলাম তা এখন কাটিয়ে উঠছি।
পাথর-সমৃদ্ধ অঞ্চল সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলা। বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, কোম্পানীগঞ্জে ৪টি, গোয়াইনঘাটে ২টি এবং কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরে ১টি করে মোট ৮টি পাথর কোয়ারি রয়েছে।
এসব কোয়ারিতে পাথর ব্যবসা ও উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কয়েক লাখ লোক। তবে অপরিকল্পিত ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের ফলে এসব কোয়ারি এলাকার পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেয়। পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে মন্ত্রিপরিষদের সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি-এর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে এসব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারির পর বিপাকে পড়েন এর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। জীবিকার উৎস বন্ধ হয়ে পড়ায় পরিবার নিয়ে সংকটে পড়েন তারা। তাদের অনেকের এখন বিকল্প আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে কৃষি। বিশেষত সরিষা চাষে মনোযোগী হয়েছেন এই চার উপজেলার পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত অনেকে। ফলে সিলেট অঞ্চলে সরিষার আবাদও ব্যাপক হারে বেড়েছে।
সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিঘার পর বিঘা বিস্তীর্ণ সরিষার ক্ষেতজুড়ে হলদে ফুল ফুটে আছে। এ যেন পাথরে ফুটেছে ফুল।
প্রায় দুই দশক পাথর ব্যবসায় জড়িত ছিলেন এই এলাকার রিয়াজ উদ্দিন। কোয়ারি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বছর কয়েক বেকার ছিলেন তিনি। এরপর মন দেন কৃষিতে।
রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আগে এই অঞ্চলে সবই পাথরকেন্দ্রিক ছিল। আমারও একটা ক্রাশার মিল ছিল। সব মিলিয়ে বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় ছিল। পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় বেকার ছিলাম। বাধ্য হয়ে ক্রাশার মেশিন কেজি দরে ভাঙারির কাছে বিক্রি করেছি। টিকে থাকতে এখন কৃষিতে মনোনিবেশ করেছি।
কোম্পানীগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কোম্পানীগঞ্জে ছয় হাজার ১৬৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এটা ২০২১ মৌসুমের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ওই বছর উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছিল রেকর্ড তিন হাজার ১১২ বিঘা জমিতে। পরে তা বেড়ে হয় তিন হাজার ৯২২ বিঘা। গত বছর তা বেড়ে পাঁচ হাজার ৩২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, এ অঞ্চলের মাটি সরিষা চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন আবাদ বাড়ছে। কয়েক বছর ধরে উপজেলায় সরিষার চাষ ও ফলন বেড়েছে। আবাদ বাড়াতে চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখানে প্রচুর পরিমাণ জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। সবারই দৃষ্টি ছিল কেবল পাথর ব্যবসার দিকে। আমাদের প্রণোদনা এখন তাদের দারুণ উদ্বুদ্ধ করেছে। অনেকেই কৃষিতে মনোযোগী হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় জানায়, এ অঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত পাঁচটি জাতের সরিষা আবাদ করে থাকেন। সেগুলো হচ্ছে- উচ্চ ফলনশীল (উফশী) সরিষা বিনা-৯, বিনা-৪, বারী-১৪, বারী-১৭ ও টরি-৭।
কেবল কোম্পানীগঞ্জই নয়, পুরো সিলেট অঞ্চলেই সরিষা চাষে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এবার সিলেট অঞ্চলে ২৪ হাজার ৯৩১ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২১ হাজার ২৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মতিউজ্জামান বলেন, সরকার ভোজ্যতেল আমদানি কমাতে চায়। সে জন্য তেলজাতীয় শস্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি। সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে রাজস্ব খাত থেকে সহায়তা, যন্ত্রপাতি, বীজ, সার বিতরণসহ নানা সহায়তা করে যাচ্ছি। সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, ওসমানীনগর উপজেলায় প্রচুর সরিষা আবাদ হয়েছে।


http://dlvr.it/T2kWwH

Post a Comment

0 Comments