Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ঈদের প্রভাব নেই সদরঘাটে, গার্মেন্টস ছুটির অপেক্ষা

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যাত্রীদের সেবা দিতে চালু করা হয়েছে বিশেষ লঞ্চ।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বসানো হয়েছে হেল্প ডেস্ক। আনসার ও পুলিশ সদস্যরা সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করছেন। এছাড়া ভিড় এড়াতে যাত্রীদের নিজ নিজ গন্তব্যের পন্টুন দিয়ে প্রবেশের নির্দেশনা দিচ্ছেন সদরঘাটের ট্রাফিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে এদিন ঘরমুখো মানুষের চাপ লক্ষ করা যায়নি।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আর মাত্র চার দিন বাকি থাকলেও টার্মিনাল এলাকায় অনেকটা জনশূন্যতা বিরাজ করছে। লঞ্চগুলো ছাড়ার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হলেও যাত্রীদের তেমন আনাগোনা নেই। দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি লঞ্চের ডেকে কিছু যাত্রী হলেও কেবিনে তেমন যাত্রীই নেই। আগে এ সময়ে যাত্রীদের চাহিদামতো টিকিট সরবরাহ করতে না পারলেও এখন পাল্টেছে সেই চিত্র। অনেক হাঁকডাক করেও যাত্রী মিলছে না। যাত্রী টানতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া রাখা হলেও যাত্রীরা আগ্রহী হচ্ছেন না।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের নিচতলায় রয়েছে সদরঘাট নৌ-থানার কার্যালয়। আনসার ক্যাম্পের পাশে রয়েছে লঞ্চ মালিক সমিতির কার্যালয়। এ ছাড়াও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি নৌ-ফাঁড়িও রয়েছে সেখানে। এগুলোর পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে অস্থায়ীভাবে ডেস্ক বসিয়ে ডিউটি করছেন র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। নদীতে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ডের সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে।
সদরঘাটের কয়েকটি লঞ্চের সুপারভাইজার, টিকিট বিক্রেতা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদকেন্দ্রিক লঞ্চে যাত্রী এখনও বাড়েনি। কিছু কিছু লঞ্চে কিছু সংখ্যক অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। তবে ঈদের ২/৩ দিন আগে যাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা।
লঞ্চ-সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়মিত দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি রুটে চলাচল করলেও প্রায় ১০টি রুট ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদ মৌসুমেও সেসব রুটে লঞ্চ চলাচলের তেমন সম্ভাবনা নেই। লঞ্চ ব্যবসায় মন্দার কারণে ইতোমধ্যে ২০টিরও বেশি লঞ্চ বিক্রি করে দিয়েছেন মালিকরা।
টার্মিনাল থেকে কথা হয় ভোলাগামী লঞ্চযাত্রী লিটন তালুকদারের সঙ্গে। পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন ডেমরায়। পেশায় আইনজীবী লিটন গ্রামে বাবা-মাস স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, লঞ্চ ছাড়বে রাত ১০টায়। ভিড় হবে ভেবে বাসা থেকে আগেভাগেই রওনা দেই। বিকেল ৫টায় টার্মিনালে পৌঁছে গেছি। রাস্তায় কোনো ঝামেলা হয়নি। এখন তো দেখি তেমন ভিড় নেই।
ঢাকা-ঝালকাঠি রুটের এমভি ফারহান-৫ লঞ্চের স্টাফ মুশফিকুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার আগে ঈদে যেরকম ভিড় বা যাত্রী হতো, এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এদিন যাত্রী কিছু বেশি ছিল, তবে শুক্রবার যাত্রীসংখ্যা বেশি হবে।
লঞ্চ মালিক সমিতির পরিচালক গাজী সালাউদ্দিন বাবু নিউজবাংলাকে বলেন, ঈদযাত্রা সামাল দিতে আমাদের পর্যাপ্ত লঞ্চ রয়েছে। যেসব রুটে যাত্রী বেশি থাকবে প্রয়োজনে সেই রুটে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঈদের সময় আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় লঞ্চ চালাই। অন্য সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়ার নিচে আমরা ভাড়া নিয়ে থাকি।
তিনি জানান, পদ্মা সেতুর ফলে সদরঘাটের যাত্রীসংখ্যা অনেকটাই সড়কমুখী হয়েছেন। এতে সদরঘাটে আগের মতো ভিড় ও যাত্রীর চাপ নেই।
এদিন দুপুরে সদরঘাট টার্মিনালে কথা হয় র্যাব-১০ এর এসপি সাইফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাধারণ ডিউটির পাশাপাশি চুরি, ছিনতাইরোধে র্যাবের ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটও কাজ করছে।
এ বিষয়ে সদরঘাট টার্মিনালের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, সদরঘাট টার্মিনালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি অসংখ্য সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এগুলো দিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, চলাচলকারী লঞ্চগুলোর স্টাফদের প্রশিক্ষণ, লঞ্চে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা সচেষ্ট আছি।
অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের আহ্বায়ক মামুন অর রশিদ বলেন, এখন যাত্রীদের তেমন চাহিদা নেই। আমরা গার্মেন্টস ছুটির অপেক্ষায় আছি। যেদিন গার্মেন্টস ছুটি হবে, সেদিন থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল শুরু করবে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতিও রয়েছে।
যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, যাত্রীবাহী নৌযানের নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত চলাচল নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কাজ করছে। যেহেতু ঝড়ের সময়, সে বিষয়েও নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।


http://dlvr.it/T8DwvP

Post a Comment

0 Comments