Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

হাওরে বাড়ছে পানি, সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

সুনামগঞ্জে নদীর পানি কমলেও হাওর অঞ্চল ও পৌর শহরের পাড়া-মহল্লায় বাড়ছে। বুধবার সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিকাল ৩টায় বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার বা ১ দশমিক ৪১ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও তেমন বৃষ্টি হয়নি। তবে ভোর থেকে একটানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুন পাড়া, শান্তিবাগ, ধোপাখালী, বাঁধনপাড়া, বলাকা, মোহাম্মদপুর, ষোলঘর, নবীনগর, কাজীর পয়েন্টসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, একতালা বা কাঁচা ঘরে থাকা মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। মঙ্গলবার রাত থেকেই অনেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। সকলের চোখেমুখে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার আতঙ্ক।
এসময় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের মানুষজন। ঝাওয়ার হাওরের পাশে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের ঘরের চাল ছুঁইছুঁই পানি। পরিবার পরিজন নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন তারা।
এদিকে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
পাহাড়ি ঢল নেমে আগে থেকেই প্লাবিত ছিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লা, জামালগঞ্জ উপজেলা। এরপর হাওরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলা।

ছাতক উপজেলার গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকেছে। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্তবতী নীজগাঁও, রতনপুর, বাগানবাড়ি, নোয়াকোট, ধনীটিলা, ছনবাড়ী, দারোগাখালী সড়কসহ ৮-১০টি কাঁচা সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন পার করছে।
উপজেলার ইছামতি-ছনবাড়ীবাজার, শিমুলতলা-মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, ছাতক-জাউয়া, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কের বিভিন্ন নিচু অংশও পানিতে তলিয়ে গেছে।
ছাতক পৌরসভারসহ নোয়ারাই, ছাতক সদর, কালারুকা, উত্তর খুরমা, চরমহল্লা, জাউয়া, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজলাবাদ, দক্ষিণ খুরমা, ভাতগাঁও, দোলারবাজার ও সিংচাপইড় ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ছাতক- গোবিন্দগঞ্জ সড়কটি প্লাবিত হয়েছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার ৮০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কের তিনটি স্থানে পানি ওঠায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এসব স্থান দিয়ে সুরমা নদীর পানি দেখার হাওরে প্রবেশ করছে।
এদিকে দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন প্লাবিত হচ্ছে।
অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসায় শাল্লায় নিম্বাঞ্চলের মানুষের বসতঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের পানি সুরমা ও কুশিয়ারা নদী দিয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মধ্যনগরেও বাড়তে শুরু করেছে নদী ও হাওরের পানি। নদী ও হাওরের পানি বাড়ার কারণে উপজেলার মধ্যনগর-মহিষখলা সড়কের নিচু অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘরসহ বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ, ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, গ্রামীণ রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বন্যার পানি উঠেছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাহিরপুরে ১০-১৫টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
বেসরকারি হিসেবে জেলার ৮৮ ইউনিয়নের কমপক্ষে ৮ লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার বা ১ দশমিক ৪১ ফুট ওপর দিয়ে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক উপজেলায় বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার বা ৪ দশমিক ৭৬ ফুট ওপর দিয়ে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও দিরাই উপজেলায় ২৯ সেন্টিমিটার বা ১১ দশমিক ৪২ ইঞ্চি ওপর দিয়ে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১০০ মিলিমিটার, লাউড়ের গড়ে ৭৮ মিলিমিটার, ছাতকে ৮৪ মিলিমিটার এবং দিরাইয়ে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এ কর্মকর্তা বলেন, নদীর পানি কমলেও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পানি বাড়তে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।


http://dlvr.it/T8V33Y

Post a Comment

0 Comments