Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বিপুল অঙ্কের পাওনা বকেয়া, বিপাকে নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা

ট্যানারি মালিকদের কাছে বছরের পর বছর পাওনা বকেয়া টাকা না পাওয়ায় দিশেহারা নওগাঁয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। ফলে পুঁজির অভাবে চলতি বছর কোরবানির চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় কোরবানি উপলক্ষে পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতিও শুরু করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
এ ছাড়া চামড়া প্রকিয়াজাতকরণের প্রধান উপকরণ লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে। চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে জেলাভিত্তিক চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়াসহ সরকারের নজরদারি বাড়ানো গেলে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল। এমনটিই মনে করছেন উত্তরবঙ্গের চামড়ার অন্যতম মোকাম নওগাঁর ব্যবসায়ীরা।
ইতোমধ্যে সরকার এ বছর চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গতবারের তুলনায় খাসির কাঁচা চামড়ার দাম দুই থেকে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ছয় টাকা বাড়িয়ে ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড়ের পাশেই চামড়া পট্টি। ঈদের দিন থেকেই চামড়া আড়তে ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠবে। কিন্তু কুরবানির চামড়া কেনার প্রস্তুতি এখনও শুরু করেননি চামড়া ব্যবসায়ীরা।
জেলায় প্রতি মৌসুমে চামড়া লবণজাত করতে প্রয়োজন হয় অন্তত ৩৫০ টন লবণ। এই পরিমাণ লবণের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭৪ লাখ টাকা। কিন্তু বকেয়া টাকার পাশাপাশি লবণের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। প্রতি বস্তায় লবণের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। মোটা লবণের দাম প্রতি বস্তা ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। এতে চামড়া সংরক্ষণের খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছেন। কয়েকজন ট্যানারি মালিকের কাছে তারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারি মালিকরা সে দামে কিনতে নারাজ।
সিন্ডিকেট থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। এসব টাকা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে চামড়া শিল্প। এসব কারণে এ বছরও চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা।
শ্রমিকরা জানান, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টি চামড়া গুদাম ছিল। সেখানে সারা বছর শতাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হতো। বর্তমানে রয়েছে দুটি গুদাম। সেখানে কাজ করেন মাত্র পাঁচজন। তবে কুরবানির মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। চামড়া গুদামে কাজ করা অনেক কষ্টের হলেও সেই তুলনায় টাকা না পাওয়ার কারণে শ্রমিকরা ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন খান বলেন, গত প্রায় পাঁচ বছরে ঢাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে আমার প্রায় ১২ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। তাই পুঁজি হারিয়ে এখন দুর্বল হয়ে পড়েছি। কুরবানির সময় ধারদেনা করে চামড়া কিনতে হয়। কিন্তু ধারের টাকা আমরা পরিশোধ করতে পারি না।
অপরদিকে ব্যবসায়ীরাও আমাদের টাকা আটকে রাখেন। এভাবে আসলে ব্যবসা চলে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, তিনি যেন দেশের অন্যতম রপ্তানি খাত চামড়া শিল্পের দিকে নজর দেন।
নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মো. মোমতাজ হোসেন বলেন, গত বছর জেলায় গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়াসহ প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার পিস চামড়া প্রস্তুত করা হয়েছিল। যার বাজারদর প্রায় ৬ কোটি টাকা। এ বছরও একই পরিমাণ চামড়া কিনে প্রস্তুত করা হবে।
গত পাঁচ বছরে (২০১৯-২৩ সাল) জেলার প্রায় ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ী ট্যানারি মালিকদের নিকট প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। বকেয়া টাকা পাওয়া গেলে আবারও ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, অনেক ব্যবসায়ী বকেয়া টাকা না পাওয়ার হুতাশে মারা গেছেন। অনেকেই সবকিছু হারিয়ে পথে বসেছে। তবে ২০২৩ সালের বকেয়া টাকার ১০-১৫ শতাংশ হারে পরিশোধ করা হচ্ছে। এই সামান্য টাকা দিয়ে আসলে তেমন কিছুই হবে না। আর এভাবে চলতে থাকলে চামড়া শিল্পে ধস নেমে আসবে।


http://dlvr.it/T8L5N5

Post a Comment

0 Comments