কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চট্টগ্রামে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় ২৯ মামলায় ৮০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে নগরী ও জেলা জুড়ে পুলিশের অভিযান চলছে।
পুলিশ বলছে, চট্টগ্রামেও পুলিশ ও তাদের স্থাপনা হামলার প্রধান টার্গেট করা হয়েছিল। আর এসব হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন চিহ্নিত শিবির ক্যাডার ও ছাত্রদল নেতারা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘরে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে আরও একটি মামলাটি হয়েছে। নতুন এই মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এটিসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হওয়া সহিংসতার ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিভিন্ন থানায় মোট ১৮টি মামলা হয়েছে।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (পিআর) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়াও সহিংসতার ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলায় আরও ১১টি মামলা হয়েছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এদেরকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে সিএমপির অভিযানে ৪১ ও জেলা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ২৭ জন।
চট্টগ্রামে সবমিলিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে করা মোট ২৯ মামলায় ৮০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এডিসি কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে হত্যা, দাঙ্গা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও নাশকতার ১৮টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে নগর পুলিশের অভিযানে এ পর্যন্ত ৪৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আবু তৈয়ব বলেন, কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের নামে সহিংসতার অভিযোগে জেলার বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত এসব মামলায় মোট ৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে পুলিশ বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় চট্টগ্রামেও টার্গেট করা হয়েছিল পুলিশ ও তাদের স্থাপনা। এতে জড়িত ছিলেন চিহ্নিত শিবির ক্যাডার ও ছাত্রদল নেতারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাই করে এবং ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এ তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
গত ১৮ জুলাই বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং চান্দগাঁও থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। থানার মূল ফটক ভাঙচুর করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিসিটিভি ক্যামেরা।
১৯ জুলাই নগরের আন্দরকিল্লা থেকে বের করা মিছিল থেকে নিউমার্কেট ও কাজীর দেউড়ি এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়। সপ্তাহকাল ধরে চলা তাণ্ডবে হামলার শিকার হন ৪৫ জন পুলিশ সদস্য। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুলিশের ১৩টি গাড়িসহ চারটি মোটরসাইকেল। দুর্বৃত্তদের হামলায় চারটি সার্ভিস সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চান্দগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং চান্দগাঁও থানায় হামলার ঘটনায় মোট চারটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলায় জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
সিএমপির উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৩ সালে সহিংসতায় যুক্তরা এবারও সক্রিয় ছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা করা। এদের অনেকেই এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছিল। জামিনে বেরিয়ে তারা আবারও একই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে।
http://dlvr.it/TB5ddt
0 Comments