সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান গেটের তালা ভেঙে মিছিল নিয়ে শাহবাগে যোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বেশ কয়েকবার পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এ সময় কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে না দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগের উদ্দেশে এগিয়ে যান।
মিছিলে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার থেকে রায়সাহেব বাজার মোড়ে আসতেই পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। তবে ব্যারিকেড এবং বাধা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী। পরবর্তীতে মিছিলটি রাজধানীর জিরো পয়েন্ট পেরিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেয়।
আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে সকাল থেকে তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের না হতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো মূল্যে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব যারা ছিলেন তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্ট হয়ে শাহবাগের দিকে রওনা হয়। শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আন্দোলনের শামিল হন তারা। এর আগে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত লাইব্রেরির সামনে জমা হতে থাকেন।
আন্দোলনে শামিল হওয়া বাংলা বিভাগের এত শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এক দফা দাবি সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটাপদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।
এদিকে আজ বিকেল ৪টা থেকেই শাহবাগ মোড়ের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। বিকেল ৫টার কিছু সময় আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে বিভিন্ন স্লোগানে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তবে শাহবাগ মোডে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। এতে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কিছু সময় ধস্তাধস্তি হয়। পরবর্তীতে ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশ সদস্যদের ঠেলে শাহবাগ মোড় ও মেট্রেরেল স্টেশনের নিচে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পিছু হটতে বাধ্য হন পুলিশ সদস্যরা।
এসময় কিছু শিক্ষার্থীকে পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপর উঠে উল্লাস করতে থাকেন। এসময় তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুনা যায়। এদিকে, শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়ার পর থেকে রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ থেকে এলিফ্যান্ট রোডগামী, বাংলা মোটরগামী, মৎস্য ভবনগামী ও টিএসসিগামী রাস্তায় যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে কোটা পুনর্বহাল করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। এতে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটা পরিবর্তন ও সংযোজন বিয়োজন করতে পারবে। সরকারি চাকরিতে কোটায় পূরণ না হলে মেধা তালিকা থেকে নেওয়া যাবে বলেও এই রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
তার আগে গতকাল বুধবার সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ১০ শতাংশ নারীর, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের ১০, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ মিলিয়ে দেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থার প্রচলন ছিল ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ওই বছরই কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে সারা দেশে আন্দোলন শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ওই প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাত সদস্য ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। গত ৫ জুন সরকারি চাকরির নিয়োগে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এতে আবারও সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে আসে।
পরে এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু গত ৯ জুন প্রাথমিক শুনানির পর আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়। এরপর থেকে আবারও আন্দোলনে নামে কোটা সংস্কার সমর্থনকারী ছাত্ররা।
http://dlvr.it/T9STMq
0 Comments