Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

গণত্রাণ: বন্যার্তদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছে টিএসসি

আকষ্মিক ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশের উত্তর-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলা। সেসব জনপদে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা। এমন অবস্থায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে পুরো দেশ।
সম্প্রতি বন্যাদুর্গতদের জন্য তহবিল ও ত্রাণ সংগ্রহের একটি বিশাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাজধানীর জনগণের সহায়তা প্রদানের প্রক্রিয়া সহজতর করেছে প্ল্যাটফর্মটি।
দেশের ১১টি জেলায় ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো চলেছে গণত্রাণ নামে ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির মূল ফটকে বসানো হয়েছে ত্রাণ সংগ্রহ বুথ। ত্রাণ সহায়তা দিতে নগরীর সব এলাকা এবং এর বাইরে থেকে হাজার হাজার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এখানে আসছেন।
শিক্ষার্থীরা অর্থ ও মালামাল দুটোই সংগ্রহ করছেন। কালেকশন বুথ ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা টাকা নিচ্ছেন এবং তার পরিমাণ অনুযায়ী তালিকাভুক্ত করছেন। ত্রাণের সব পণ্যও যথাযথভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কলেজ এবং স্কুলপড়ুয়াদেরও স্বেচ্ছাসেবী কাজে সক্রিয় হতে দেখা গেছে।
প্রতিদিন সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন। মানুষ মৌলিক ওষুধ, শুকনো খাবার, জামাকাপড়, স্যানিটারি ন্যাপকিন, পানি, লাইফ জ্যাকেট ইত্যাদিসহ প্রয়োজনীয় নানা পণ্য ও অর্থ দান করছে।
রাজধানীর মীরবাগ থেকে শুক্রবার কিছু শুকনো খাবার দিতে টিএসসিতে এসেছিলেন সায়মা আক্তার নামে এক নারী।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে কঠিন সময়ে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমার দায়িত্ব। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী দান করেছি। এক ব্যাগ মুড়ি আর কয়েক বোতল পানি দিলাম। আমি যদি আরেকটু সক্ষম হতাম তাহলে আরও বেশি দান করতে পারতাম।
মোবাশ্বির বিন কাশেম বলেন, দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি আনন্দিত। প্রত্যেকে তাদের যা আছে তা নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে আসছেন। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকার ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতা করা উচিত।
টিএসসি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ভ্যান, পিকআপ ও ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গে এলাকা পরিষ্কার রাখতে স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যস্ত। ইতোমধ্যে টিএসসির গেমস রুম ও টিএসসির ক্যাফেটেরিয়া ত্রাণসামগ্রীতে ভরে গেছে। ক্যাফেটেরিয়াটি যেন গুদামে পরিণত হয়েছে।
আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতেও ত্রাণসামগ্রীতে ডাকসুর ক্যাফেটেরিয়াও ভরে গিয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও বিভাগের অন্যান্য সংগ্রহ বাদে শুধু টিএসসির তহবিল সংগ্রহ বুথ থেকে মোট ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা সংগ্রহ করা হয়। স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের চেয়ে এদিন দাতার সংখ্যা ছিল কয়েকগুণ বেশি।
মিরপুর থেকে আসা শিবলী নামের আরেকজন বলেন, আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এখন সময় এসেছে দেশকে গড়ে তোলার, আমাদের শক্তি ও ঐক্য দেখানোর। ভারত আমাদের ভাঙার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি। ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
তিনি হাসিমুখে আরও বলেন, আমাদের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও স্থিতিশীল নয়। আমরা যদি দেশবাসীর পাশে না দাঁড়াই তাহলে কে এগিয়ে আসবে?
কয়েকজন রিকশাচালককেও টিএসসির তহবিল সংগ্রহ বুথে টাকা দিতে দেখা গেছে।
এক রিকশাচালকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এর অংশ হতে পেরে আমি আনন্দিত।
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে কাজ করছেন। তাদের কেউ কেউ যানজট নিয়ন্ত্রণ করছেন, কেউ টাকা সংগ্রহ করছেন, কেউ ত্রাণসামগ্রী নিচ্ছেন; আবার যারা এলাকা চিনছেন না তাদেরও পথ দেখিয়ে সহায়তা করছেন কোনো কোনো শিক্ষার্থী। সর্বোপরি কিছু শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে ত্রাণ পাঠানোর জন্য মালামাল মিক্সিং ও প্যাকেজিংয়ের কাজ করছেন।
এছাড়া বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজধানীর ব্যস্ত মোড়গুলো থেকে তহবিল সংগ্রহ করছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে তারা পানিবন্দি মানুষদের সাহায্যার্থে তাদের বাড়তি কাপড় দান করেছেন। প্রতিটি হল থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলগুলো কক্ষ থেকে পোশাক সংগ্রহ করে ব্যাগে ভরে রাখেন।
তবে বড় অঙ্কের তহবিল সংগ্রহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে একটি কনসার্টের আয়োজনও করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা ও গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি নিয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এটা সম্ভবত আমার স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্বর্গের মতো লাগছে। প্রতি মুহূর্তে মানুষ সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এখানে আসছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছে, আশার আলো জ্বালিয়েছে।


http://dlvr.it/TCHjMg

Post a Comment

0 Comments