টানা বৃষ্টি ও ভারত হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনী জেলায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বন্যার কবলে পড়েছেন প্রায় ১১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, র্যাব, বিজিবি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ছাত্র-জনতার চেষ্টায় উদ্ধার করা হয়েছে দেড় লাখ মানুষকে।
নিজ উদ্যোগেও মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাহীনা আক্তার সোমবার রাতে তথ্যগুলো নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, জেলায় এ পর্যন্ত সরকারি/বেসরকারি উদ্যোগে ৬২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র্যাব হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আরও ৪৮ হাজার প্যাকেট খাদ্যদ্রব্য মানুষের মধ্যে বিতরণ করে। এর বাইরেও ব্যাপকভাবে বন্যা কবলিতদের কাছে খাদ্যপণ্য পৌঁছে দেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
এদিকে জেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়াতে এরই মধ্যে বন্যার পানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফেনী সূত্র জানায়, মুহুরী নদীর পানি কমে যাওয়ায় পরশুরাম, ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির লক্ষণীয় উন্নতি হয়। ফেনী শহরেও পানি কমছে। সোনাগাজী, দাগনভূঞাতে বন্যা পরিস্থিতি সোমবার অবনতির দিকে থাকলেও সারা দিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী।
বন্যাদুর্গত এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্ধার তৎপরতা উল্লেখযোগ্য হারে লক্ষ করা গেছে।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বন্যার্তদের উদ্ধার ও শুকনা খাবার সহায়তায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে বলে জানান ডিসি শাহীনা আক্তার।
ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্রে জানা যায়, সোমবার পর্যন্ত নগদ ৪০ লাখ টাকা এবং দুই হাজার টন চাল ত্রাণকার্যের জন্য বরাদ্দ এসেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলার কিছু কিছু এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও দুই-তৃতীয়াংশ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে৷
এ মুহূর্তে ফেনীতে বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে৷ এসব বিষয় জরুরিভাবে ব্যবস্থা না হলে এখানে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে।
চলতি বছরের ২ জুলাই টানা চার থেকে পাঁচ দিনের অতি ভারি বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রথম দফা ব্যাপক বন্যা সৃষ্টি হয়। তখন উজানের পানির তোড়ে স্থানীয় মুহুরী কহুয়া সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অন্তত ২০টি স্থানে ভেঙে পানি ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়।
এক মাসের ব্যবধানে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে টানা ভারি বৃষ্টিপাতে দ্বিতীয় দফা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে নতুন করে আরো ১০টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে পুনরায় ওিই উপজেলাগুলো বন্যা কবলিত হয়।
আগস্টের ২০ তারিখে তৃতীয় দফা ভয়াবহ বন্যার শিকার হন ফেনীর সব উপজেলার মানুষ।
http://dlvr.it/TCQJmF
0 Comments