Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দেশকে একটি স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, দেশ যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখন ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছেন। পতিত স্বৈরাচার বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
রোববার বিকেলে হোটেল গ্র্যান্ড সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতের সব জঞ্জাল পরিষ্কার করে সত্যিকারার্থে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে হবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি এবং করব। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই, তবে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্র-ছাত্রী ও আমজনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ৫ আগস্ট স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, অতীতের সব জঞ্জাল সাফ করে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সর্বস্তরের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলার কাজ চলছে। কিন্তু পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে বসে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছেন।
এ থেকে প্রমাণ হয়, এই দলটি কখনও বাংলাদেশকে সুশাসনের দেশ হিসেবে নির্মাণের চেষ্টা করেনি। ১৯৭২ সালের পরবর্তীতে তারা জনগণের সরকার গঠন না করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই দলটিই ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক ধ্বংস করে দিয়ে আবারও বাকশাল কায়েমের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে ফেলেছিল।
বিএনপি মহাসচিব সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সারাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পেরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে হটিয়েছে। এর ফলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার্তদের সাহায্য করার জন্য দেশব্যাপী মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের যে স্পিরিট তৈরি হয়েছে সেটাই নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পতিত স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া জঞ্জাল পরিষ্কার করে নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই মুহূর্তে দেশের বড় একটি অংশ ভয়াবহ বন্যার কবলে। বাংলাদেশে বৃষ্টির পাশাপাশি ত্রিপুরা রাজ্যের বাঁধগুলো ছেড়ে দেয়ার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভাটির দেশ হিসেবে পানি ছাড়ার আগে ভারতের এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক করা প্রয়োজন ছিল।
তিনি বলেন, উজান থেকে আমাদের যেসব নদী দিয়ে পানি আসে তার বেশিরভাগই ভারত থেকে আসে। ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে ভারতের সঙ্গে কথা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আজ পর্যন্ত সেটার সমাধান হয়নি। ফারাক্কা বাঁধের কিছুটা হিস্যা পাওয়া গেলেও ২০২৬ সালে এটি রিনিউ করতে হবে। তা নাহলে তারা পানি দিয়ে বাংলাদেশকে কাবু করে রাখতে এটাকে এক ধরনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অতীতে সুরমা-কুশিয়ারার উজানে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রচেষ্টা শুরু হলে বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। অনেকে মনে করেন যে এরই ফলশ্রুতিতে তাকে গুম করা হয়।
এ সময় মির্জা ফখরুল এম ইলিয়াস আলীকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি মহাসচিব জানান, গত ১৫ বছরে প্রায় ৭শ জনকে গুম করা হয়েছে, প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন এবং এক লাখ ৪৫ হাজার গায়েবি মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়েছেন। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই নেত্রী কখনও মাথানত করেননি। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা আইনিভাবে তা মোকাবেলার চেষ্টা করছি।
এম ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া সবাইকে নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল এসেছে। এখন আমরা সঠিক তথ্য পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। সরকারও সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেনি। আমরা তাদের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানতে চাই।
অন্যান্যের মধ্যে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সিলেটে পৌঁছান। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি হযরত শাহজালাল ও শাহপরাণ (রাহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


http://dlvr.it/TCMFBt

Post a Comment

0 Comments