অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে খেলাপি ঋণে জর্জরিত দেশের ব্যাংকিং খাত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দীর্ঘদিন ধরেই ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের ১৭ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ প্রথমবারের মতো দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যা বিগত ১৬ বছরে আর্থিক খাতে ব্যাপক কেলেঙ্কারি ও অনিয়মের শিকার হওয়া ব্যাংক সেক্টরের নাজুক অবস্থাকে তুলে ধরেছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
ব্যাংকাররা বলেন, খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য এতোদিন স্বার্থান্বেষী মহলগুলোর কারসাজিতে চাপা পড়ে ছিল। নীতি-সহায়তা দিয়ে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ গোপনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে লাফিয়ে বাড়ছে মন্দ ঋণ। আগের সব রেকর্ড ভেঙে খেলাপি ঋণ রেকর্ড অংকে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিক সময়ে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। ওই সময় দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা বেড়েছে।
খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে খেলাপি ঋণ বেশি হয়েছে। আগে টার্ম লোনের গ্রেস পিরিয়ড ছিল ছয় মাস। এখন তা তিন মাস করা হয়েছে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা হওয়ার কারণে ঋণ পরিশোধ কম হচ্ছে। এর কারণেও খেলাপি বেড়ে গেছে।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ এতোটা বেড়েছে।
http://dlvr.it/TGDVCk
0 Comments