বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের সম্প্রতি সাজাপ্রাপ্ত ও গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছেন তাদের স্বজনেরা।
কারাবন্দি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস কারাবন্দি বিরোধী নেতা-কর্মীদের স্বজনদের পক্ষে আইনজীবীদের মাধ্যমে স্মারকলিপি জমা দেন। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিরোধীদলীয় নেতাদের কারাগার থেকে মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন স্বজনরা।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে কারাগারে আটক বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা বিচারের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেব প্রধান বিচারপতির কাছে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
আমরা বিশ্বাস করি, বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে আপনি (প্রধান বিচারপতি) দেশের বিচার বিভাগকে রক্ষা, একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক মিথ্যা, ভুয়া ও হয়রানিমূলক মামলায় গণগ্রেপ্তার, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন, জামিন প্রত্যাখ্যান এবং আদালতে গণহারে সাজা প্রতিরোধে প্রধান বিচারপতি সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন বলেও তারা প্রত্যাশা করেন।
স্বজনরা বলেন, বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের রাজনৈতিক বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তির জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আদালতকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মঙ্গলবার সকালে মানববন্ধন করেন বিরোধী দলের কারাবন্দি নেতাকর্মীদের স্বজনরা। ছবি: নিউজবাংলা
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন
প্রধান বিচারপতিকে স্মারকলিপি দেয়ার আগে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিরোধীদলীয় নেতাদের কারাগার থেকে মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন কারাবন্দি বিএনপি নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা।
তাদের অনেকের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড এবং তাদের কারাবন্দি প্রিয়জনের ছবি।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্বজনদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
এ সময় স্বজনদের কেউ কেউ প্রিয়জনের অনুপস্থিতিতে তাদের দুঃখ ও কষ্টের কথা তুলে ধরেন। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কর্মসূচি শেষে আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে কারাবন্দি বিএনপি নেতাদের স্বজনরা স্মারকলিপি জমা দিতে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় অভিমুখে যেতে শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে কয়েকজন আইনজীবীর মাধ্যমে তা প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়।
হুইল চেয়ারে করে কর্মসূচিতে আসা আফরোজা আব্বাস বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও নিপীড়ন অব্যাহত রাখার অভিযোগ করে সরকারের তিরস্কার করেন।
তিনি বলেন, আমরা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে বাস করছি। এটা কেমন দেশ? কারাবন্দি এক নেতার স্ত্রী তার দুই সন্তানকে নিয়ে এখানে এসেছেন। শিশুটির বাবাকে পুলিশ জেলহাজতে নিয়ে গেছে। আমরা ন্যূনতম আইনি সুবিধাও পাচ্ছি না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহান চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, আব্দুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, হাবিবুর রহমান হাবিব, লুৎফুজ্জামান বাবর, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিলকিস জাহান শিরিন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, অর্থ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শরিফুল আলম, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শামীমুর রহমান শামীম, শেখ রবিউল আলম, রফিকুল ইসলাম মজনু, আমিনুল হক, সাইফুল আলম নীরব, মুনায়েম মুন্না, আবুল কালাম আজাদ ও এসএম জাহাঙ্গীর প্রমুখসহ বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম অসুস্থতার কারণে কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেননি। তার পাঠানো চিঠি পাঠ করেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের স্ত্রী রহিমা শাহজাহান মায়া বলেন, আমার স্বামীকে কোনো অপরাধ ছাড়াই দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এভাবে অনেক বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীকে সাজা দেয়া ও কারারুদ্ধ করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, কারাগারে বন্দি বিরোধী দলের নেতাদের মা, বাবা, স্ত্রী, মেয়ে, ছেলেসহ স্বজনরা কাঁদছে। কিন্তু তা এই সরকারের হৃদয়ে নাড়া দেবে না। তারা নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জেলে ঢুকাচ্ছে।
আমরা এই পরিস্থিতির অবসান চাই। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং বর্তমান সরকারকে উচ্ছেদ করে এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে রাজপথে নামি।
কর্মসূচিতে অন্য অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারাও উপস্থিত হন এবং অবিলম্বে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জেল থেকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
http://dlvr.it/SzQjTr
0 Comments