দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসন থেকে এবার ৩৬ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব প্রার্থীর অধিকাংশের স্ত্রীর স্বর্ণাংলকার নেই। কোনো কোনো প্রার্থীর স্ত্রীর অর্থ-সম্পদ বলতে নেই কিছুই।
খুলনা-১ আসনে লড়ছেন ছয়জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ননী গোপাল মণ্ডলের স্ত্রীর শুধু ৩ দশমিক ৩৪ একর কৃষি জমি রয়েছে। তার স্ত্রীর কোনো স্বর্ণালংকার নেই। ১৫ ভরি স্বর্ণ থাকলেও তা ননী গোপাল মণ্ডলের নামে।
তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের প্রার্থী চন্দ্র প্রামানিকের নামে ৪৫ ভরি স্বর্ণ থাকলেও তার স্ত্রী একেবারে সম্পদহীন। ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায়ের নিজ নামে ১০ লাখ টাকার স্বর্ণ অলংকারদি থাকলেও তার স্ত্রীর কিছুই নেই। তবে জাতীয় পার্টির লাঙলের প্রার্থী কাজী হাসানুর রশিদের স্ত্রীর কিছুটা ধনী। তার নামে ২০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। এ ছাড়া আর কিছুই নেই।
খুলনা-২ আসন থেকে লড়ছেন ছয়জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী সেখ সালাহউদ্দিনের স্ত্রীর প্রচুর অর্থ সম্পদ রয়েছে। তার নগদ ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৮০ টাকা, ব্যাংকে ১৪ কোটি ২ লাখ ৫১ হাজার ২৮৪ টাকা, শেয়ার ২৩ কোটি ২৬ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র রয়েছে ২৫ লাখ টাকার, গাড়ি রয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৪১৫ টাকার, কক্সবাজারে জমি রয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকার, ঢাকায় বাড়ি রয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬ হাজার ৬৩৫ টাকার ও গুলশানে ফ্লাট রয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকার। এত সম্পদ থাকলেও তার স্বর্ণালংকার রয়েছে মাত্র ১৩ লাখ টাকার।
এ ছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের দেবদাস সরকারের স্ত্রীর অর্থ-সম্পদ-স্বর্ণ কিছুই নেই। সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটে (মুক্তিজোট) ছড়ি প্রতীকের বাবু কুমার রায়ের নিজ নামে ২৫ ভরি স্বর্ণ থাকলেও স্ত্রীর কিছুই নেই। বিএনএমর নোঙরের প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল আমিনের স্ত্রীর মাত্র ৩ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. গাউসুল আজমের নিজ নামে ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণ থাকলেও স্ত্রীর কিছুই নেই। তবে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমানের স্ত্রীর ২০ হাজার টাকা স্বর্ণ রয়েছে।খুলনা-৩ আসন থেকে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম কামাল হোসেনের নিজ নামে ১২ হাজার ৫০০ টাকার স্বর্ণ থাকলেও তার স্ত্রীর নামে স্বর্ণ রয়েছে ১০ হাজার টাকার।
জাকের পার্টির গোলাপ ফুলের এসএম সাব্বির হোসেনের স্ত্রীর ৫ ভরি স্বর্ণ ব্যতীত আর কিছু নেই। জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের নিজ নামে ১০ ভরি স্বর্ণ থাকলেও স্ত্রীর নেই। এ ছাড়া ঈগল প্রতীক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথীর নিজ নামে ৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।
খুলনা-৪ আসন থেকে এবার লড়ছেন ১২ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদীর স্ত্রীও প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক। তার নগদ ১ কোটি ৮৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭১ টাকা, ব্যাংকে ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৭৩০ টাকা, শেয়ারে ৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩ হাজার ৭০৯ টাকা, অন্যান খাতে ৭ কোটি ৩৩ লাখ ৮ হাজার ৩৬৭ টাকা ও ৩৪ লাখ টাকার বাড়ি রয়েছে। তার স্বর্ণালংকার রয়েছে মাত্র ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকার। তবে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর নিজের নামে রয়েছে ২১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকার স্বর্ণ। এদিকে স্ত্রীর থেকেও বেশি অলংকারের মালিক শিল্পপতি সালাম মুর্শেদী।
ওই আসনের জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. ফরহাদ আহমেদের নিজ নামে ১৮ ভরি স্বর্ণ থাকলেও, স্ত্রীর কোনো অলংকার নেই। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতীকের প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের শেখ হাবিবুর রহমান ও সোফা প্রতীকে এমডি এহসানুল হকের স্ত্রীর কোনো স্বর্ণ নেই।বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাবের মনিরা সুলতানেরও কোনো অলঙ্কার নেই। ইসলামী ঐক্যজোটের মিনারের রিয়াজ উদ্দীন খানের নিজ নামে ২০ ভরি স্বর্ণ থাকলেও স্ত্রীর কিছুই নেই।
বিএনএম প্রার্থী নোঙর প্রতীকের এস এম আজমল হোসেনের নিজ নামে ৭০ ভরি ও স্ত্রীর নামে ৯০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকে মো. জুয়েল রানার স্ত্রীর ৮ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।ঈগল প্রতীকে মো. রেজভী আলমের নিজ নামে অজ্ঞাত মূলের কিছু স্বর্ণ থাকলেও তার স্ত্রীর কোনো অলঙ্কার নেই। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মোত্তজা রশিদী দারার নিজ নামে ৬ তোলা ও তার স্ত্রীর নামে ১২ তোলা স্বর্ণ রয়েছে।
খুলনার-৫ আসনে লড়ছেন ৪ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নারায়ন চন্দ্র চন্দের স্ত্রীর অর্থ সম্পদের পরিমাণটাও বেশ ভাল। তার নগদ ৭৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬৩ টাকা, সঞ্চয়পত্রে ২৭ লাখ টাকা রয়েছে। তিনি বিয়ের সময়ে ১৫ ভরি স্বর্ণ উপহার পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তার সাবেক মন্ত্রী স্বামী কখনো তাকে কোনো অলঙ্কার কিনে উপহার দেননি।
জাতীয় পাটির লাঙলের মো. শাহীদ আলমের স্ত্রীর এক ভরি ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকের শেখ সেলিম আকতারের স্ত্রীর ১৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেনের নিজ নামে বা তার স্ত্রীর নামে কোনো স্বর্ণ নেই।
খুলনা-৬ আসনে লড়ছেন ৭ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামানের নিজ নামে এক ভরি ও তার স্ত্রীর নামে সাড়ে ৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। জাতীয় পার্টির লাঙলের মো. শফিকুল ইসলাম মধুর স্ত্রীর কাছে নগদ ১৫ লাখ টাকা থাকলেও কোনো স্বর্ণ নেই। তবে মধুর নিজ নামে ১৪ তোলা স্বর্ণ রয়েছে, যা তিনি উপহার পেয়েছিলেন।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আম প্রতীকের মো. আবু সুফিয়ান নিজের নামে এক ভরি স্বর্ণ কিনেছিলেন। তবে স্ত্রীকে কখনো স্বর্ণ কিনে দেননি। তার স্ত্রী বিয়ের সময়ে ১৫ ভরি অলংকার উপহার পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের প্রার্থী মির্জা গোলাম আজমের স্ত্রীর স্বর্ণ রয়েছে মাত্র ১০ তোলা, বিএনএম প্রার্থী নোঙরের এস এম নেওয়াজ মোরশেদের ৩০ তোলা স্বর্ণ থাকলেও তার স্ত্রীর রয়েছে মাত্র ২০ তোলা।
তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের মো. নাদির উদ্দিন খানের ২ ভরি ও তার স্ত্রীর ৭ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের জি এম মাহবুবুল আলমের স্ত্রীর নগদ ৩ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।
http://dlvr.it/T0Xf91
0 Comments