সিলেট আসনে এবার নেই শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী, ডামি প্রার্থীও হননি দলের কেউ। তাই কেন্দ্রে ভোটার আনা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সিলেট-১-এর আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের কর্মী-সমর্থকরা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপিবিহীন এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন না হয় এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে প্রয়োজনে সব আসনে ডামি প্রার্থী রাখারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
এদিকে স্থানীয়দের ভাষ্য, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আব্দুল মোমেন ও ইমরান আহমদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও বিরামহীনভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দুজনই। ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
তবে সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে সিলেট-১ আসনে ভোটার উপস্থিতি সবচেয়ে কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা, নগর এলাকায় ভোট নিয়ে মানুষের অনাগ্রহ, বিএনপিসহ সমমনাদের নির্বাচনবিরোধী প্রচারণা এবং আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের গা ছাড়া ভাবের কারণে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি অনেক কম হতে পারে বলে ধারণা তাদের।
দলীয় প্রার্থী আব্দুল মোমেন প্রতিদিনই প্রচার চালালেও তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বেশিরভাগই সক্রিয় নন বলেও জানান তারা। এতে ভোটার উপস্থিতি আরও কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আসন বলা হয় সিলেট-১-কে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, এখানে প্রচলিত আছে, এই আসন থেকে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হন, সে দলই সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার পর থেকেই এমনটি হয়ে আসছে। ফলে এ আসনের ভোটের দিকে নজর থাকে সবারই।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, টানা দ্বিতীয়বারের মতো এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুর মোমেন। আসনটি থেকে জাতীয় পার্টি মনোনয়ন দিয়েছিল দলটির মহানগর শাখার সভাপতি শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুলকে, কিন্তু তিনি শেষপর্যন্ত প্রার্থী হননি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কিন্তু শেষ মুহূর্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন তিনি। ফলে অনেকটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে পড়েন মোমেন।
সিলেট-১ আসনে মোমেন ছাড়াও এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন আরও চারজন, তবে এই চার প্রার্থীর কাউকেই এখন পর্যন্ত মাঠে দেখা যায়নি বলে জানান স্থানীয় ভোটাররা। কোথাও তাদের পোস্টার, ব্যানার বা প্রচারণাও নেই।
তবে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই জানিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, সিলেটজুড়ে ভোটের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে উৎসবভাব বিরাজ করছে। ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে এসে নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের রায় দেন সে জন্য আমরা তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করছি।
মোমেনের মতো ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে সিলেট-৪ আসনেও। এই আসনে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। ইমরানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির আবুল হোসেন ও ইসলামী ঐক্যজোটের নাজিম উদ্দিন কামরান। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে আবুল হোসেনকে প্রচারণায় দেখা গেলেও নাজিম উদ্দিন কামরান এখন পর্যন্ত নীরব।
এদিকে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে দেখা যাচ্ছে তাকে।
এ দুই আসনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, শক্ত প্রতিদন্দ্বি না থাকায় সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রতিটি পাড়ায় ভোটারদের কেন্দ্রে আসার জন্য আহ্বান করছেন। আশা করছি, ভোটাররা কেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
http://dlvr.it/T0k3pL
0 Comments