গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তা চুক্তি সই করার জন্য ঢাকা ও দিল্লির প্রতি গ্যারান্টি ও সালিশি ধারাসহ একটি চুক্তি করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক যৌথ বিবৃতিতে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ এই আহ্বান জানান। সূত্র: ইউএনবি
তিনি বলেন, দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি কেবল অববাহিকাভিত্তিক চুক্তির ভিত্তিতেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আইএফসির আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল মজুমদার, লেখক ও গবেষক সিরাজুদ্দীন সাথী, তমিজউদ্দীন আহমদ, আইএফসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ড. নাজমা আহমদ এবং সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম আজাদ।
তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ পুরোপুরি ভারতের মর্জির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ছবি: সংগৃহীত
বিবৃতিতে বলা হয়, উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ নেপাল ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সই করা পানি চুক্তিতে নিশ্চয়তা ও আরবিট্রেশন ক্লজ রয়েছে।
ফলে সিন্ধু ও মহাকালী পানিচুক্তি পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সই করা গঙ্গার পানি চুক্তিতে শর্ত পূরণ করা হয়নি। আর এই ত্রুটির কারণে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আশানুরূপভাবে গড়ে ওঠেনি।
১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মোট ৪১ দিন পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে পরামর্শ করে গঙ্গার ওপর ফারাক্কা বাঁধ চালু করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে বাংলাদেশে একতরফা পানি প্রত্যাহার অব্যাহত থাকে এবং পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দেয়।
পরে ১৯৭৭ সালে ৮০ শতাংশ পানির প্রাপ্যতার গ্যারান্টি ক্লজ দিয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি পানি চুক্তি সই হয়। কিন্তু এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবায়নের পরিবর্তে ১৯৮২ সালে গ্যারান্টি ক্লজ বাদ দিয়ে ৫ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এরপর ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টনের জন্য আবারও ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি সই হয়। ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।
উদ্ভূত বাস্তবতায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরে এই চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তার পানি চুক্তি সইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন।
এই গঙ্গা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পায়নি। চুক্তিতে গ্যারান্টি ও আরবিট্রেশন ক্লজ না থাকায় এটি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। নবায়নের সময় চুক্তির এই দুর্বলতা দূর করতে হবে।
২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তা নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে তা আজও করা হয়নি।
শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর কোনো পানি বাংলাদেশে ছাড়া হয় না। পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা ব্যারেজ থেকে সামান্য পরিমাণ পানি বাংলাদেশে আসে।
অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি পুরোপুরি ছেড়ে দেয়ার ফলে প্রতি বছর বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তীব্র বন্যা ও নদীর তীর ভাঙনের কারণে ব্যাপক ফসল নষ্ট হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের কাছে এই নদীর উৎপত্তিস্থল। তাই নদীর প্রবাহের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন। এ পর্যন্ত তিস্তাসহ অন্যান্য অভিন্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে একতরফা পানি প্রত্যাহার বেড়েছে।
স্বল্পমেয়াদি সুবিধার জন্য অদূরদর্শী বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে এই প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
http://dlvr.it/T3rPN5
0 Comments