পরিবারে অভাব-অনটনের কারণে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি আরজু মিয়া (৩২)। দারিদ্র্যের কারণে কিশোর বয়সে যোগ দেন মোটরসাইকেল ও রিকশাভ্যান মেরামতের গ্যারেজে।
দীর্ঘদিন অন্যের গ্যারেজে কাজ করার পর বাড়ির পাশের রাস্তার কাছে নিজেই মোটরসাইকেল-রিকশা-ভ্যান মেরামতের গ্যারেজ দেন মানিকগঞ্জের সিংগাইরের দক্ষিণ সারারিয়া এলাকার এ তরুণ। সেই গ্যারেজে বসে নতুন গাড়ি তৈরির স্বপ্ন দেখেন তিনি। দুই বছর চেষ্টার পর তার সেই স্বপ্ন রূপ নিয়েছে বাস্তবে।
পুরাতন যন্ত্রাংশ দিয়ে আরজু তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন জিপ। তার এ গাড়িটি এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছে সিংগাইরে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাচারিচালিত কালো রঙের জিপে চালকের আসনসহ পাঁচটি আসন আছে। এতে ট্রাক্টরের চাকা ব্যবহার করা হয়েছে।
যেকোনো পরিস্থিতিতে চলাচলের উপযোগী করে গাড়িটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান আরজু মিয়া।
এ গ্যারেজ মেকানিক বলেন, গ্যারেজে কাজের পাশপাশি একটা গাড়ি তৈরির জন্য একটা একটা যন্ত্রাংশ কিনতে শুরু করি। এরপর আস্তে আস্তে সেগুলো জোড়া দিতে থাকি। এভাবে দুই বছর ধরে গাড়ির পেছনে অতিরিক্ত সময় দিয়েছি।
অবশেষে কিছুদিন আগে গাড়িটির কাজ শেষে হয়েছে। এরপর গাড়িটি নিয়ে ঘুরতে বের হই।
ছেলের নামের সঙ্গে মিল রেখে জিপের নামকরণ জুবায়ের হোসাইন করেছেন আরজু।
তার ভাষ্য, আমি যে গাড়িটি তৈরি করেছি, তাতে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। টাকা থাকলে এক মাসের মধ্যে একটা গাড়ি তৈরি করা সম্ভব, কিন্তু টাকার অভাবে দুই বছর সময় লেগেছে।
সরকার যদি আর্থিক সহায়তা করে, তাহলে গাড়ি তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে ছড়িয়ে দিতে পারব। কারণ পর্যটক এলাকায় এ ধরনের গাড়ির বিশেষ চাহিদা রয়েছে। তা ছাড়া আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের ভাঙাচোরা রাস্তায় নিরাপদে চলতে পারবে এবং যাত্রীরা আরামে যাতায়াত করতে পারবে।
আরজুর স্ত্রী বিথী আক্তার বলেন, সংসারে অভাব- অনটনের মধ্যেও তিনি (আরজু) সবসময় ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন। আমরা পরিবারের সদস্যরাও তাকে উৎসাহিত করেছি। কারণ সবসময় তিনি চিন্তা করতেন নতুন কিছু একটা করি।
এখন তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আমাদের সাথে মানুষও অনেক খুশি হয়েছে। তার বানানো গাড়ি দেখতে প্রতিদিন দেশের অনেক জায়গা থেকে লোকজন আসে।
জিপ নির্মাতার মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আরজু যখন মানুষের দোকানে (গ্যারেজ) কাজ করত, তখন থেকেই বিভিন্ন জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া (গবেষণা) করত। বিয়ের আগে তো বাড়িতেই অনেক যন্ত্রপাতি নিয়ে এটা সেটা বানাত।
ওর (আরজু) খুব শখ ছিল পুরাতন জিনিসপত্র দিয়ে নতুন কিছু করার। অবশেষে আল্লাহ ওর (আরজু) মনের ইচ্ছা পূরণ করছে। ওর গাড়ি দেখে আমরা সবাই অনেক খুশি হইছি।
তৈরির পর থেকেই আরজুর জিপ নিয়ে আলোচনা চলছে জামশা ইউনিয়নের অলিতে-গলিতে।
জামশা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান গাজী কামরুজ্জামান বলেন, আরজু মিয়া গরিব হলেও সৎ ও কর্মঠ মানুষ। সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করে আয়-রোজগার করে আসছেন। কয়েক বছর আগে আরজু নিজে একটা গ্যারেজ দিয়েছে। গ্যারেজে কাজের পাশপাশি মেধা খাটিয়ে আরজু খুব সুন্দর একটা গাড়ি তৈরি করেছেন।
আরজুর গাড়ি দেখতে মনোমুগ্ধকর ও বেশ আরামদায়ক। তার গাড়ি তৈরির বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাসিক মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে। দেখি আরজুর জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া যায় কি না।
http://dlvr.it/T6vgs1
0 Comments