হলের ময়লা-আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলো থেকে প্রতিদিন উৎপন্ন হওয়া নানা ধরনের ময়লা-আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার ঢাবিতে আয়োজিত অষ্টম নগর সংলাপে এ কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এস এম মাকসুদ কামাল। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে টেকসই নগরায়ন বিষয়ে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ এবং ২০টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কনসোর্টিয়াম, আরবান আইএনজিও ফোরামের যৌথ আয়োজনে নগর সংলাপের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটি ইন্টারন্যাশনালের ন্যাশনাল ডিরেক্টর জেমস স্যামুয়েলসের সভাপতিত্বে সংলাপের উদ্বোধনী সেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে ব্র্যাকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. লিয়াকত আলী, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনীষ কুমার আগারওয়াল ও গ্লোবালওয়ান বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার রায়হান মাহমুদ কাদেরী বক্তব্য রাখেন।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির এ যুগে ঢাবিতেও এ ধরনের কর্মকাণ্ড হওয়া উচিত।
ঢাবির প্রতিটি হলের সামনে বিভিন্ন রঙের ডাস্টবিন রাখা হবে। ময়লার ধরনের ওপর ভিত্তি করে এসব ডাস্টবিনে বর্জ্য ফেলবেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে এসব বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, আপাতত এটিকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে নেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতা প্রয়োজন।
মাকসুদ কামাল বলেন, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার দিক থেকে এশীয়দের মধ্যে একেবারে তলানিতে বাংলাদেশের অবস্থান। দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাবিতেই যে গবেষণা হয় তা অপ্রতুল। এতদিন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা গবেষণামুখী ছিল না। এখন নতুন সিলেবাসে বিদ্যালয় থেকেই শিশুরা উদ্ভাবনী ক্ষমতার অংশীদার হতে পারবে।
উদ্ভাবন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, টেকসই উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্টদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশীদারত্ব বৃদ্ধি করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে নগর উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষক, স্টেকহোল্ডার্স, সিটি করপোরেশন, এনজিও, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নীতিনির্ধারকসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
নগরায়ন নিয়ে উপাচার্য বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে আগে প্ল্যানিং করা হয়, তারপর করা হয় নগরায়ন। কিন্তু আমাদের দেশে আগে উন্নয়ন করা হয়, তারপর নগরায়ন করা হয়। এটি অনেক বড় সমস্যা। কারণ নগরায়ন হয়ে যাওয়ার পর প্ল্যানিং করাটা প্রকৃত অর্থে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তখন যেটি হয় সেটি হলো, বিট এনভায়রনমেন্টকে কীভাবে ম্যনেজ করা যায়। এটাকে ম্যানেজ করা খুবই কঠিন, বিশেষত বাংলাদেশের মতো দেশে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিভিন্ন দেশে চলমান যুদ্ধের কারণে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলো সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশগুলোই প্রধানত দায়ী। এজন্য তাদেরই এর দায়ভার নিতে হবে এবং দরিদ্র দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তবে আমাদের পরিবেশ দূষণের জন্য আমরা নিজেরাও অনেকটা দায়ী।
ঢাকা মহানগরী বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ নগরীর একটি উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আমরা নানাভাবে এই মহানগরীর পরিবেশ দূষণ করছি। সুনাগরিক হিসেবে পরিবেশ সংরক্ষণে সকলকে সচেতন হতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
ঢাবির সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ভিত্তিক প্রজেক্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী বাজেটে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ঢাবির সমন্বয়কল্পে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে। বরাদ্দের ওপর ভিত্তি করে ঢাবির নানা প্রকল্পে উত্তর সিটি করপোরেশন সমন্বয় করবে।
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরি প্রসঙ্গে মেয়র আতিক বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকার আমিনবাজার ল্যান্ডফিল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০২৫ সাল থেকে এই এক ল্যান্ডফিলের মাধ্যমে সাড়ে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
উল্লেখ্য, আরবান আইএনজিও ফোরাম বাংলাদেশ ২০টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার একটি কনসোর্টিয়াম যা ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ফোরামের উদ্দেশ্য হলো নগর উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং অনানুষ্ঠানিক বসতিতে নিম্ন আয়ের সম্প্রদায়ের টেকসই উন্নয়ন সাধন করা। এই উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে আরবান ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।


http://dlvr.it/T7VbSx