নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার খালগুলো দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
এসিল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে খালগুলো দখলমুক্ত করতে বুধবার সকালে অভিযানে নামেন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহীনুর আক্তার।
উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের তারাইল বিলের সোনাখালী-তারাইল খালের অবৈধ বাঁধ কেটে শুরু হয় খাল উদ্ধার কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে এই খালে নির্মল মাঝি নামে এক ব্যক্তি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন।
প্রথম দিনের অভিযানে ৪টি খাল দখলমুক্ত করা হয়। অভিযানে খালে অবৈধভাবে দেয়া বাঁধ কেটে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এছাড়া ইউপি সদস্য লায়েক শেখের দখলে থাকা সোনাখালি বিলের কুমলাবতী খাল, ইউছুব আলী দাড়িয়ার দখলে থাকা কোনেরবাড়ি কলমামুনিয়া খাল, পরশ শিকদারের দখলে থাকা দেওপুরা খালও দখল মুক্ত করা হয়।
খালগুলো উদ্ধারকালে স্থানীয় উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। খাল দখলমুক্ত হওয়ায় সকলে আনন্দে উল্লসিত হয়ে পড়ে।
বছরের পর বছর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার অর্ধশত ছোট বড় বিলের প্রায় শতাধিক সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করে আসাছিল প্রভাবশালী মহল। যার ফলে বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, পরিবেশ বিপর্যয়, নৌ চলাচল ব্যাহত ও কৃষি কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েন মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মৎস্যজীবীরা।
কোটালীপাড়ার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের কোনের ভিটা গ্রামের কলমামুনিয়া খালের বাঁধ কেটে দখলমুক্ত করছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক দত্ত। ছবি: নিউজবাংলা
কোটালীপাড়া উপজেলার রামনগড়ের বিল, রথিয়ারপাড় বিল, মাছপাড়ার বিল, কুমুরিয়া বিল, বৈকণ্ঠপুর বিল, লখন্ডার বিল, মুশুরিয়ার বিল, পিড়ারবাড়ি বিল, পলোটানা বিল, ধোরাল বিল, চিথলিয়ার বিল, পশ্চিম দিঘলিয়ার বিল, পূর্বপাড়া বিল, চিত্রাপাড়া-শুয়াগ্রাম বিল, সাতুরিয়ার বিল, কান্দি বিল, আশুতিয়ার বিল, পোলশাইল বিল, বর্ষাপাড়া বিল, ছত্রকান্দা বিল, দেওপুরা বিল, সোনাখালি বিল, ফুলবাড়ি বিল, কোনের বাড়ি বিল, বহলতলী বিল, চাটখালির বিল, তারাইল বিল, গোপালপুর বিল, চরগোপালপুর বিল, গৌতমেরা বিল, মাচারতারা বিল, গজালিয়া বিল, তালপুকুরিয়া বিল, হিজলবাড়ি বিল, তারাকান্দর বিল, কুঞ্জবন বিল, পারকোনা বিলসহ প্রায় অর্ধশত ছোটবড় বিল রয়েছে। এসব বিলের প্রায় শতাধিক খাল দখল করে নিয়ে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালী মহল।
বিষয়টি নিয়ে ২৩ জুন নিউজবাংলায় কোটালীপাড়ায় শতাধিক খাল দখল করে মাছ চাষ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নজরে আসে কোটালীপাড়া উপজেলা প্রশাসনের। এরপর ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার সকালে এসিল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে পিঞ্জুরী ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলের খাল উদ্ধারে অভিযান শুরু করেন কোটালীপাড়া ইউএনও শাহিনুর আক্তার।
এসময় খালের ভেতরে অবৈধভাবে দেয়া বাঁধ কাটায় স্থানীয়রা তাদের সহযোগিতা করেন। উদ্ধার অভিযান শুরু করে ইউএনও চলে গেলে পুরো অভিযানের নেতৃত্ব দেন কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) প্রতীক দত্ত।
সোনাখালী-তারাইল খালের অবৈধ বাঁধ কেটে খাল উদ্ধার হওয়ার পরপরই আনন্দ-উল্লাস করে পলো ও ঝাঁকি জাল নিয়ে খালে মাছ ধরতে নেমে পড়েন অনেকে।
উপজেলার কোনের ভিটা গ্রামের আলম মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগেও খাল বিল থেকে সারা বছর দেশীয় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত অনেক দরিদ্র মৎস্যজীবী। প্রভাবশালীদের দখলে খাল চলে যাওয়ার পর থেকে তাদের মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। অনেকেই আবার বেকার হয়ে পড়ে। এখন এসব খাল উদ্ধার হওয়ায় পুনরায় তারা আবার মাছ ধরার সুযোগ পেল।
উপজেলা দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু বলেন, অবৈধভাবে দখলকৃত খাল উদ্ধারে প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে শুধু উদ্ধার অভিযান চালালেই হবে না। এসব খাল নজরদারিতে রাখতে হবে, যাতে দখলদাররা পুনরায় বাঁধ দিয়ে খাল দখল করতে না পারে।
কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক দত্ত বলেন, অবৈধভাবে দখলকৃত সরকারি খাল উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চলবে। সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করার কোনো সুযোগ নেই। খালে সকল জনসাধারণ মাছ ধরতে পারবে। ভবিষ্যতে এসব খাল কেউ দখলে নেয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
http://dlvr.it/T8pDMX
0 Comments