তীব্র দাবদাহ শেষে দীর্ঘ সময় ধরে অনাবৃষ্টির কারণে কৃষি নির্ভর মেহেরপুরের মাঠ-ঘাট নদী-নালা পানির অভাবে ফেটে চৌচির। মাঠে থাকা ফসল উৎপাদনের একমাত্র ভরসা এখন সেচযন্ত্র। অথচ ঠিক সেচের এ ভরা মৌসুমেই চুরি হয়েছে চারটি ট্রান্সফরমার।
বুধবার মধ্যরাতে জেলার গাংনী উপজেলার রামনগর মাঠ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওই ট্রান্সফরমারগুলো। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষক ও মালিকরা।
ট্রান্সফরমার মালিকরা বলছেন, মধ্যরাত পযর্ন্ত পাহারা দেয়া হয়েছে, আবার নিরাপত্তার জন্য কারেন্টের খাম্বার সাথে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। তারপরও চুরি হয়েছে ট্রান্সফরমার। আর কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে অনা বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে যদি ফসলে সেচ দিতে না পারেন, তাহলে ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে না।
যাদের ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে তাদের মধ্যে একজন শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার এ পোলে তিনটি ট্রান্সফরমার ছিল। আমরা এই মাঠেই রাত ১২টা পযর্ন্ত ছিলাম। ভোরের দিকে সেচ যন্ত্র চালু করতে এসে দেখি ট্রান্সফরমার সব যন্ত্রপাতি মাটিতে পড়ে আছে। আর ভেতরে থাকা তামার তার ও অন্য যন্ত্রাংশ বের করে নিয়ে চলে গেছে।
তিনি বলেন, আমার এই মাঠে দেড় শতাধিক জমি সেচের জন্য নেয়া আছে। কৃষকরা যেমন সেচ দেয়া নিয়ে বিপদে পড়েছে। আমি বিপদে আছি কীভাবে দ্রুত সময়ে ট্রান্সফরমার ম্যানেজ করব। আমার বিশ্বাস যারা এতো নিরাপত্তার মধ্যেও ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে গেছে তারা খুবই অভিজ্ঞ।
আরেক ভুক্তভোগী নান্নু বলেন, আমি পাঁচ বছর ধরে এই মাঠে সেচ দিয়ে আসছি। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় এমনিতেই পানি দেয়ার খুব চাপ চলছে। দিনে রাতে সেচ দিয়েও চাহিদা পপূরণ করতে পারছি না। তারপর আবার হয়ে গেলো ট্রান্সফরমার চুরি।
তিনি বলেন, আমি অন্য এলাকার ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার কথা শুনে নিরাপত্তার সার্থে খাম্বার সাথে শেকল দিয়ে তার সাথে তালা মেরে আটকিয়ে রেখেছি। তারপরও খাম্বা থেকেই ট্রান্সফরমারে থাকা সব কিছু বের করে নিয়ে চলে গেছে। আবার ট্রান্সফরমার পেতে পল্লী বিদুৎ অফিসের দুয়ারে ঘুরতে হবে কত দিন, তার ঠিক নেই।
কৃষক আলতাফ খাঁন বলেন, আমার এ মাঠে ধানের আবাদ রয়েছে। বুধবার নিড়ানি দিয়েছি। বৃহস্পতিবার সেচ দেয়ার কথা আছে। সকালে মাঠে এসে শুনছি ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেছে। এখন সেচ দেয়ার অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই। আমি পড়ে গেছি বিপদে, সেচ না দিতে পারলে ফসল ভালো হবে না।
আরেক কৃষক খোকন আলী বলেন, আমাদের এ মাঠে সবজির আবাদই বেশি। এখন মাঠে বেগুন, কচু, ঝাল, লাউয়ের আবাদ রয়েছে। সবজি আবাদ করতে গেলে ব্যাপক সেচের প্রয়োজন পড়ে। এমনিতেই এ বছর বৃষ্টি নেই নেই। যার ফলে সেচের ওপর নির্ভর করেই আবাদ চলছে। এবার মনে হচ্ছে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, তাই আমাদের দাবি, পল্লী বিদুৎ অফিস যেন দ্রুত ট্রান্সফরমারের ব্যাবস্থা করে মাঠে থাকা ফসল রক্ষা করে।
পল্লী বিদুৎ বামন্দী এরিয়া অফিসের এজিএম কম হানিফ রেজা বলেন, আমরা সংবাদ পেয়েছি রামনগর মাঠ থেকে রাতে চারটি ট্রান্সফরমার চুরি গেছে। মাঠে থাকা ফসলের কথা চিন্তা করে আমরা অফিস থেকে দ্রুত সময়ে ট্রান্সফরমারগুলো ব্যবস্থা করে দিতে সার্বিক সহযোগিতা করব।
http://dlvr.it/T8Cy80
0 Comments