ব্যবসায়ী কিংবা খেলাপি উভয়ের জন্যই ব্যাংক ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার নতুন পথ তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য এই সুবিধার জন্য আবেদন করতে ঋণের ন্যূনতম ১০ শতাংশ অর্থ আগে জমা দিতে হবে।
এমন শর্ত দিয়ে ঋণ থেকে প্রস্থান সংক্রান্ত নীতিমালা বা এক্সিট পলিসি প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার এই নীতিমালার আলোকে নিজস্ব নীতিমালা তৈরি করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই নীতিমালার ফলে যে কেউ যেকোনো সময় চাইলে তার ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে খেলাপি থেকে বের হতে পারবেন। এছাড়া ব্যবসা ও শিল্প ঋণের ক্ষেত্রেও ব্যাংক থেকে প্রস্থান করা সম্ভব হবে।
তারা বলছেন, অনেকেই নানা কারণে তার ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যেতে চান। তবে নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় ব্যাংকঋণ শোধ করতে তারা সমস্যায় পড়েন। ব্যাংকগুলোও অনেক সময় পুরো অর্থ পরিশোধ করতে গ্রাহকদের চাপ দেয়। এতে ঋণ থেকে বের হতে পারেন না গ্রাহক।
নতুন নীতিমালার ফলে ব্যাংকগুলো সুবিধা পাবে। আবার ব্যবসায়ীরাও তাদের সুবিধামতো ব্যবসা গুটিয়ে নিতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালায় বলেছে, আবেদনপ্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে ব্যাংক কর্তৃক তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভবিষ্যতে আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম এ ধরনের শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে অথবা নিয়ন্ত্রণবহিভূর্ত কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে অথবা ঋণগ্রহীতা কর্তৃক প্রকল্প বা ব্যবসা বন্ধ করার ক্ষেত্রে ঋণের প্রস্থান সুবিধা দেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান ঋণস্থিতির ন্যূনতম ১০ শতাংশ এককালীন পরিশোধ হলেই এই কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
এছাড়া যে ব্যাংক এই সুবিধা দেবে তাদের পরিচালনা পর্ষদ বা নির্বাহী কমিটি দ্বারা এই সুবিধার অনুমোদন নিতে হবে। তবে মূল ঋণ সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, এক্সিট পলিসিতে আবেদনকারী গ্রাহক নতুন করে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এছাড়া তার পুরো ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ঋণের মানের কোনো পরিবর্তন হবে না।
এই সুবিধা নিয়ে তিন বছরের মধ্যে পুরো ঋণ শোধ করতে হবে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চাইলে এই গ্রাহকরা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবেও চিহ্নিত হবেন না।
কেন এই সুবিধা দেয়া হবে তারও বর্ণনা দেয়া হয়েছে নীতিমালায়। বলা হয়েছে- ঋণগ্রহীতার ব্যবসা, শিল্প বা প্রকল্প অনেক সময় নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সেই ব্যবসা থেকে গ্রাহকের নগদ প্রবাহ বন্ধ কিংবা কিস্তি পরিশোধ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে এসব গ্রাহক ঋণখেলাপি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েন, যা ইচ্ছাকৃত খেলাপিও নয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোন নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় একেক ব্যাংক একেক পথে হাঁটে। তাই সব ব্যাংকের জন্য অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হলো।
নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, এক্সিট সুবিধা পুরোপুরি সমন্বয়ের আগে ঋণের বিপরীতে গৃহীত জামানত অবমুক্ত করা যাবে না। তবে ব্যাংক, গ্রাহক ও ক্রেতা আগ্রহী হলে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আলোচ্য ঋণের বিপরীতে বন্ধকীকৃত সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে ঋণ সমন্বয় করা যাবে। এই সুবিধা প্রাপ্তির পর গ্রাহক পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণ আদায়ে ব্যাংক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
http://dlvr.it/T9Mb2C
0 Comments