Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ইউরো কোয়ার্টারে মহারণের অপেক্ষা

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে কোয়ার্টার ফাইনালে মহারণ দেখার অপেক্ষায় সারা বিশ্বের ফুটবলামোদীরা। শুক্র ও শনিবার (৫ ও ৬ জুলাই) দুটি করে ম্যাচের মাধ্যমে সেমিফাইনালের জন্য সেরা চার দল চূড়ান্ত হবে।
অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে সবশেষ দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে তুরস্ক। এর ফলে চূড়ান্ত হয়ে গেছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি আসরের সেরা আট দল।
কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয়া দলগুলো হচ্ছে- সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ইংল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস ও তুরস্ক।
সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় স্বাগতিক জার্মানির মুখোমুখি হবে স্পেন। এরপর ওইদিন রাত ১টায় দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে পর্তুগাল ও ফ্রান্স।
পরদিন শনিবার বাকি দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। সেদিন কোয়ার্টার ফাইনালের তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে গত আসরের রানার্স-আপ ইংল্যান্ড ও কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা সুইজারল্যান্ড।
এরপর রাত ১টায় সেমিফাইনালের শেষ টিকিট কাটতে মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস ও তুরস্ক।
সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই শুরু হওয়ার আগে দলগুলোর অবস্থা, শক্তি ও সম্ভাব্য লড়াই কেমন হবে- তার তুলনামূলক বিশ্লেষণে চোখ রাখা যাক।

জার্মানি-স্পেন
সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত দশটায় স্বাগতিক জার্মানির মুখোমুখি হবে স্পেন। ইউরোর চলতি আসরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে দুই দলই।
চলতি আসরে চার ম্যাচ খেলে মাত্র দুটি গোল খেয়ে প্রতিপক্ষের জালে ১০ বার বল পাঠিয়েছে জার্মানি। জামাল মুসিয়ালা, ফ্লোরিয়ান ভিয়ার্টসের মতো তরুণদের সঙ্গে দলটিতে রয়েছে মানুয়েল নয়ার, আন্টনিও রুয়েডিগার ও টনি ক্রুসদের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলার। ফলে একপ্রকার দুর্জয় দল হিসেবে এবারের আসরে আবির্ভূত হয়েছে স্বাগতিকরা।
অন্যদিকে, গ্রুপ পর্বে একমাত্র দল ছিল স্পেন, যারা তিনটি ম্যাচই জিতে শেষ ষোলো খেলতে আসে। প্রথম তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ৫ বার বল পাঠালেও স্পেনের রক্ষণ ভাঙতে পারেনি কেউ। এরপর শেষ ষোলোয় জর্জিয়াকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে জার্মানিকে একপ্রকার হুঙ্কার দিয়েই রেখেছে লুইস দে লা ফুয়েন্তের শিষ্যরা।
চলতি আসরে স্পেনের জার্সি গায়ে আগুন ঝরিয়ে চলেছেন লামিন ইয়ামাল ও নিকো উইলিয়ামস। পাশাপাশি মাঝমাঠে পেদ্রি ও রক্ষণে রবিন লে নরমান্দ আলো ছড়াচ্ছেন প্রতিটি ম্যাচে। তার সঙ্গে রয়েছেন স্পেনের অধিনায়ক রদ্রি, রিয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক দানি কারভাহাল ও আতলেতিকো মাদ্রিদ অধিনায়ক আলভারো মোরাতা। ফাবিয়ান রুইস-মার্ক কুকুরেইয়াদের সঙ্গে নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে প্রতিটি ম্যাচে ক্ষুরধার ফুটবলের ডালি মেলে স্পেন।
ফলে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালেই ফাইনালের আমেজ পেয়ে যেতে পারে দর্শক।

ফ্রান্স-পর্তুগাল
শুক্রবার রাত একটায় দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে পর্তুগাল ও ফ্রান্স।
এই দুই দলের পারফরম্যান্স এক কথায় বলতে গেলে জার্মানি-স্পেনের ঠিক উল্টো। প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত ওপেন প্লে থেকে গোল পায়নি ফ্রান্স। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে আত্মঘাতী গোলে ১-০ ব্যবধানের জয়, পরের ম্যাচে ডাচদের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র এবং শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে প্রথম গোল পেলেও ১-১ সমতায় টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে শেষ ষোলোয় ওঠে গত বিশ্বকাপের রানার্স-আপরা। এরপর বেলজিয়ামের বিপক্ষে ফের আত্মঘাতী গোলের কল্যাণে ১-০ ব্যবধানে জিতে কোয়ার্টারে উঠেছে দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা।
অন্যদিকে, গ্রুপ পর্বে চেক রিাপবলিক ও তুরস্কের বিপক্ষে ২-১ ও ৩-০ ব্যবধানে জিতলেও শেষ ম্যাচে ২-০ গোলে পর্তুগালকে হারায় পুচকে জর্জিয়া। শেষ ষোলোতে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পেলেও প্রায় হেরেই বসেছিল রবের্তো মার্তিনেসের শিষ্যরা।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো তো কেঁদেই ফেলেছিলেন মাঠের মধ্যে। তবে ১-১ গোলের সমতায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা শেষ হওয়ার পর ম্যাচ পেনাল্টিতে গড়ালে দারুণ নৈপুণ্য দেখান পর্তুগিজ গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তা। স্লোভেনিয়ার প্রথম তিনটি স্পট কিক ঠেকিয়ে দিয়ে একাই তারকায় ভরা পর্তুগালকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছেন তিনি।
তাই এই ম্যাচটিতেও শক্তির বিচারে সমানে সমানে লড়াই হবে বলে আশা করা যায়।

ইংল্যান্ড-সুইজারল্যান্ড
শনিবার রাত দশটায় কোয়ার্টার ফাইনালের তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে গত আসরের রানার্স-আপ ইংল্যান্ড ও কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা সুইজারল্যান্ড।
চলতি আসরে ইংল্যান্ডের অবস্থা এক কথায় হযবরল। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে কোনোমতে ১-০ গোলের ব্যবধানে জেতে হ্যারি কেইনের দল। এরপর ডেনমার্কের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্র হলেও শেষ ম্যাচে স্লোভেনিয়ার জালে বলই জড়াতে পারেনি তারা। শেষ ষোলোয় স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে তো হেরেই বসেছিল ইংল্যান্ড। নেহাত বেলিংহ্যাম শেষ মুহূর্তে বাঁচিয়ে দেয় তাদের।
অপরদিকে, নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে সুইজারল্যান্ড। এ পর্যন্ত আসতে তাদের পথটাই সবচেয়ে কঠিন ছিল।
গ্রুপ পর্বে স্বাগতিক জার্মানি, এবারের আসরের ডার্ক হর্স খ্যাত হাঙ্গেরি ও দুর্দান্ত টিম ওয়ার্কে প্রতিশ্রুতিশীল স্কটল্যান্ডের সামনে পড়ে মুরাত ইয়াকিনের শিষ্যরা। তবে প্রথম ম্যাচেই ডার্ক হর্সদের ৩-১ গোলে হারানোর পর স্কটল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্র করে সুইজারল্যান্ড। এরপর শেষ ম্যাচে শক্তিশালী জার্মানিকেও ১-১ গোলে রুখে দেন গ্রানিট জাকা-ব্রিল এম্বলোরা।
শেষ ষোলোয় ইতালিকে ২-০ ব্যবধানে কাঁদিয়ে নিজেদের আরও উচ্চতায় নিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড। তাই আত্মবিশ্বাসে এখন উড়ছে তারা।
তবে টুর্নামেন্টজুড়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কৌশলী দল সুইসরাই। নিজেদের শক্তি সম্পর্কে তারা যেমন জানে, তেমনি শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সামনে নিজেদের দুর্বলতার দিকগুলোও মাথায় রাখে তারা। আর এভাবেই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিটি শক্ত চ্যালেঞ্জ উতরে গেছে তারা।
এবার তাদের সামনে ইংল্যান্ড। গত ম্যাচগুলোতে নিজেদের মেলে ধরতে না পারলেও যেকোনো সময় জ্বলে ওঠার মতো প্রতিভা যে দলটির আছে- তা মাথায় নিয়েই মাঠে নামবে সুইজারল্যান্ড। ফলে ডাগআউটে গ্যারেথ সাউথগেট ও মুরাত ইয়াকিনের স্নায়ুযুদ্ধ দেখার অপেক্ষায় থাকবে ফুটবল বিশ্ব।

নেদারল্যান্ডস-তুরস্ক
শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত একটায় সেমিফাইনালে ওঠার শেষ লড়াইয়ে মাঠে নামবে নেদারল্যান্ডস ও তুরস্ক।
১৯৮৮ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়ন নেদারল্যান্ডস সর্বশেষ সেমিফাইনাল খেলে ২০০৪ সালে। এবার তুর্কিজয় করতে পারলে ২০ বছরের সেমির আক্ষেপ ঘুচবে তাদের।
অন্যদিকে, ২০০৮ সালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টিতে জিতে ইউরোর ইতিহাসে মাত্র একবার সেমিফাইনালে ওঠে তুরস্ক। এবার ডাচ বাধা পেরোতে পারলে ১৬ বছর পর ফের সেমিফাইনালে উঠবে তারা।
এই ম্যাচটির আগে বিশ্লেষকরা থাকবেন সবচেয়ে অনিশ্চয়তায়। কেননা, গ্রুপ পর্ব থেকে কোনোমতে শেষ ষোলোয় উঠলেও, রোমানিয়াকে রীতিমতো শাসন করে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ডাচরা।
এই ম্যাচের আগে মেম্ফিস ডিপাই বলেছিলেন, তাদের ইউরো প্রতিযোগিতা কেবল শুরু। মাঠের খেলায় তার কথার প্রমাণ মেলে। ফলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়ায় দলটির প্রতিভাবান ফুটবলারদের ফর্মও যে ফিরবে, তা খানিকটা নিশ্চিত।
অপরদিকে, জর্জিয়াকে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ৩-১ গোলে হারানোর পর পর্তুগালের কাছে ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয় তুরস্ক। এরপর চেক প্রজাতন্ত্রকে ২-১ ব্যবধানে হারানোর পর সমশক্তির অস্ট্রিয়াকেও ২-১ ব্যবধানে কাবু করেছে ভিনসেন্সো মনতেল্লার শিষ্যরা। ফলে একপ্রকার মিশ্র অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে দলটি।
শেষ দুই ম্যাচে স্পষ্ট ফেবারিট প্রতিপক্ষের সামনে পরিস্কারভাবে ভুগতে দেখা গেছে তুরস্ককে। তবে মাঠে অসাধারণ ধৈর্য্যের স্বাক্ষর রেখে শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তারা।
সেমির লড়াইয়ে এবার তাদের সামনে রোনাল্ড কুমানের নেদারল্যান্ডস। ক্ষিপ্র ফুটবলের চেয়ে কৌশলী ফুটবল খেলতেই বেশি দেখা গেছে দলটিকে। ধৈর্য্য ধরে বিভিন্ন প্রচেষ্টায় ম্যাচজয়ের দিকে তাদের মনোযোগ দেখা গেছে। ফলে ধৈর্য্য আর কৌশলে দুই কোচের কে কাকে হারাবে, তার ওপরই ম্যাচটির ভাগ্য নির্ভর করবে।


http://dlvr.it/T986zF

Post a Comment

0 Comments