ঢাকায় ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভিসা কেন্দ্রের অভ্যন্তরে আকস্মিক বিক্ষোভে এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ জানিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন।
হাইকমিশনের এক ভারতীয় কর্মকর্তা সোমবার রাতে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, আমরা বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। আমরা মৌখিকভাবে নোট পাঠিয়েছি। আমাদের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। আমাদের জন্য এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া উচিত নয়।
সোমবারের ঘটনায় তারা কোনোভাবে আস্থাশীল নন উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা জানান, তারা মূলত জনগণের অনুরোধে পাসপোর্ট ফেরত দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং লোকজনকে হুমকি দেয়া হয় এবং আতঙ্কিত।
ভারতীয় ভিসার দাবিতে সোমবার হঠাৎ করেই ঢাকায় যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রে (আইভিএসি) বিক্ষোভ করেছেন ভিসাপ্রত্যাশীরা।
ভারতীয় হাইকমিশনের ওই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হাইকমিশনের ওই কর্মকর্তা জানান, তারা তাদের আবেদনপত্র ঠিক রেখে সব পাসপোর্ট ফেরত দিচ্ছেন, যাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে আবেদনকারীরা আবার তাদের পাসপোর্ট জমা দিতে পারেন।
জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু অনেকে পাসপোর্ট ফেরত চাইছেন, তাই তাদের আবেদন বাতিল না করেই আমরা পাসপোর্ট ফেরত দিচ্ছি।
ভারতীয় হাইকমিশন ইতোমধ্যে বকেয়া মেডিক্যাল ভিসার ছাড়পত্র দিয়েছে।
ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, সোমবার বেলা ১১টা থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ ভিসা প্রত্যাশী ওই কেন্দ্রে ভিড় করলেও কোনো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তাৎক্ষণিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যেখানে লোকজনকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ভারতীয় সহযোগীরা, সাবধান..., এক দফা এক দাবি- আমরা ভিসা চাই ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায় তাদের।
ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভিএসি) বাংলাদেশ এর আগে জানিয়েছিল, সীমিত কার্যক্রমের কারণে ভিসা প্রক্রিয়ায় বেশি সময় লাগতে পারে। তাই আমরা এখন পাসপোর্ট ফেরত দিচ্ছি এবং কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলে এটি পুনরায় প্রক্রিয়া করা হবে। আবেদনকারীকে এসএমএসের মাধ্যমে তার পাসপোর্ট পুনরায় জমা দেয়ার জন্য অবহিত করা হবে।
বাংলাদেশে ভারতের সবচেয়ে বড় ভিসা কার্যক্রম রয়েছে এবং গত বছর ১৬ লাখ মানুষ ভারত ভ্রমণ করেছে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ পর্যটন উদ্দেশ্যে, ৩০ শতাংশ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে এবং ১০ শতাংশ অন্যান্য উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী দেশটি ভ্রমণ করেন।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা এর আগে ২২ আগস্ট বাংলাদেশে ভারতীয় স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে হাইকমিশনার ভার্মা ওই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে তাদের ভিসা সেন্টার পর্যায়ক্রমে সীমিত করতে থাকে। চলতি মাসের শুরুর দিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগে বাংলাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভিসা সেন্টার বন্ধ করে ভারত।
তবে সম্প্রতি ঢাকায় যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা সেন্টারে সীমিত কার্যক্রম চালু হয়েছে। অন্য ভিসা সেন্টারগুলো এখনও বন্ধ রয়েছে। এতে করে ভিসাপ্রত্যাশীরা অনেক বিপাকে রয়েছেন। বিশেষ করে যারা তাদের পাসপোর্ট ভিসা সেন্টারে জমা দিয়েছেন, তাদেরকে তা পেতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে।
http://dlvr.it/TCPLJF
0 Comments