Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ত্রাণ রাখার জায়গা নেই টিএসসিতে, সংগ্রহের নতুন স্থান ঢাবি জিমনেসিয়াম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আর ত্রাণসামগ্রী রাখার জায়গা নেই। ত্রাণের প্যাকেটে পুরো টিএসসি ভরে গেছে। ফলে নতুন করে যারা ত্রাণ আনবেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সমন্বয়ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, নগদ টাকা টিএসসিতেই সংগ্রহ করা হবে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার্ত মানুষকে সহায়তার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গণত্রাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
শনিবার তৃতীয় দিনের মতো এই কর্মসূচি চলে।

শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে ত্রাণসামগ্রী আর নগদ অর্থ সহায়তা দিতে মানুষের ঢল নেমেছে। এতো বিপুলসংখ্যক মানুষ এসে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন যে সেগুলো গ্রহণ করতে কয়েক শ স্বেচ্ছাসেবককে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে বাইরে লেগে যাচ্ছে ত্রাণ দিতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইন আর গাড়ির সারি।
অর্থ সহায়তার ব্যাপারে আয়োজকরা বলছেন, বৃহস্পতিবার প্রথম দিনেই নগদ সংগ্রহ হয় ২৯ লাখ টাকা। পরদিন শুক্রবার নগদ সংগ্রহ হয় এক কোটি ৮ লাখ টাকা। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক একাউন্টে আসে আরও কয়েক লাখ টাকা।
শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গণত্রাণ কর্মসূচি চলে। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ জানা যায়নি। বর্তমানে তা গণনার কাজ চলছে।
শনিবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারে ত্রাণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসে এসে থামেন ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম। ঢাকায় তার একটি ব্যক্তিগত মাছের ফার্ম রয়েছে বলে জানান তিনি।

আব্দুস সালাম বলেন, আকস্মিক বন্যায় ডুবছে আমার দেশ। এমতাবস্থায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবারই দায়িত্ব। তাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছি।
ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রত্যেক্যেই একেকটা দুর্গ হব। এবং এই যে আমরা তাদের প্রতিহিংসার বিপরীতে এক হয়েছি সেটাই প্রমাণ করে আগামীর বাংলাদেশ হবে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র।
ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের মতো নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ গত তিনদিন ধরে শিক্ষার্থীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাবির টিএসসিতে ত্রাণ নিয়ে আসছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এই গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে প্রথম দিনেই ভালো সাড়া মেলে। শুক্রবার এবং শনিবার অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ত্রাণ আনা এবং সংগ্রহের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও আশপাশের পুরো এলাকা অনেক সময় ব্লক হয়ে যাচ্ছে। ত্রাণের গাড়িতে পুরো এলাকায় যানজট তৈরি হচ্ছে। টিএসসির ভেতরের ফটকের সামনে নগদ অর্থ সংগ্রহের বুথে মানুষ সারিবদ্ধ হয়ে টাকা দিচ্ছেন। ফলে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের লাইন টিএসসির বাইরে পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হয়েছে।

যে টিএসসিতে শুধু দলবেঁধে আড্ডা আর গল্পের চিত্র দেখা যেতো সেই টিএসসিতে এখন সহায়তা দেয়ার জন্য মানুষের লম্বা লাইন আর পুরো টিএসসি ভর্তি ত্রাণ নেয়া-দেয়ার চিত্র। ঢাবি শিক্ষার্থীরা আগে কখনও এমন চিত্র দেখেননি।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আশপাশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষও এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ত্রাণ সংগ্রহ ও প্যাকেটিংয়ের কাজ করছেন।
এ সময় অনেকে দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা, আজাদি আজাদি, আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে নিজেদের উজ্জীবিত রাখতে দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টিএসসিকেন্দ্রিক ফান্ড সংগ্রহ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট, অনুষদ, হল ও ব্যাচভিত্তিক শিক্ষার্থীরা আলাদা আলাদা ত্রাণ এবং ফান্ড সংগ্রহ করে সেগুলো প্যাকেটিংয়ের কাজ করছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশপাশের নিউমার্কেট এলাকা, শাহবাগ, চানখাঁরপুল, পলাশীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও বাজার থেকে ফান্ড সংগ্রহ করছেন শিক্ষার্থীরা।

ইতোমধ্যে সংগৃহীত কিছু ত্রাণ বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠিয়েও দেয়া হয়েছে।
টিএসসির এই গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি তদারকির দায়িত্বে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনিই প্রথম এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। শুক্রবার রাতে ত্রাণ প্যাকেটিং শেষে শনিবার ভোরে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দেন হাসনাত। এদিন তিনি কুমিল্লায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।
রোববার থেকে তিনি বন্যাকবলিত এলাকায় গণরান্না কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এতে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন হাসনাত।


http://dlvr.it/TCKdSx

Post a Comment

0 Comments