সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সফল শিল্পোদ্যোক্তা ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে কোনো কোনো দুষ্টচক্র চক্রান্ত শুরু করেছে। ড. নাফিজ সরাফাত দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত স্বচ্ছতা, সততা ও সুনামের সঙ্গে তার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন; কিন্তু অহেতুক তাকে জড়িয়ে কিছু কল্পনাপ্রসূত রিপোর্ট তৈরি করে ছাপানো হয় কিছু পত্রিকায়। সেসব রিপোর্টের প্রতিটিতেই রয়েছে নানা অসঙ্গতি। যেকোনো সচেতন পাঠকমাত্রই তা সহজে অনুধাবন করতে পারবেন। এসব কর্মকাণ্ড মূলত প্রকৃত অপরাধীদের আড়ালের অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
গত ১৮ আগস্ট এমনই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে দৈনিক সমকাল। পত্রিকাটির ওই রিপোর্টে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরাত দেওয়া হলেও তাতে দুদকের কোনো কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। বরং তথ্য-উপাত্তবিহীন প্রতিবেদনের মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রের ওই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছে।
শুধু তাই নয়, রিপোর্টের এক জায়গায় লেখা হয়েছে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ১৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সফটওয়্যার কেনার জন্য ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। ১৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে কোনো প্রতিষ্ঠান ৮ কোটি টাকা ঘুষ দেবে, এমন যুক্তি শিশু কিংবা পাগলের কাছেও হাস্যকর মনে হবে। অন্য দু-একটি পত্রিকাকেও একই পথ অনুসরণ করতে দেখা গেছে, যা খুবই দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।
কেউ কেউ যে ঈর্ষান্বিত হয়ে তার সুনাম, সুখ্যাতি ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে অপতৎপরতা শুরু করেছে, তা বোঝার জন্য এই একটি উদাহরণই যথেষ্ট। এ অবস্থায় ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তার আইনজীবীর মাধ্যমে দৈনিক সমকাল কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি প্রতিবাদ পাঠান। ওই প্রতিবাদে বলা হয়, হাজার কোটি টাকা নয়ছয়, নাফিজ সরাফাত দুদকের জালে শীর্ষক শিরোনামে তথ্য-উপাত্তবিহীন উড়োচিঠির মতো কল্পনাপ্রসূত ও বানোয়াট প্রতিবেদনটিতে যা প্রকাশিত হয়েছে তা নাফিজ সরাফাতের জন্য অবমাননাকর এবং মানহানিকর। প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের কেউই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। এতেই প্রমাণ হয় যে, এটি কোনো বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ নয়। অথচ আমাদের চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লেনদেনের বিষয়ে একাধিক মিথ্যা ও বানোয়াট কথা প্রকাশ করেছেন। এটি শুধু তার দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট করার হীন উদ্দেশ্য ছাপানো হয়েছে।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, কোনো সরকারি সংস্থা কর্তৃক ড. নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা হয়নি এবং তার সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের কেউ কোনো যোগাযোগও করেননি। এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন বা যেকোনো সরকারি সংস্থাকে যেকোনো লেনদেনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব ব্যাখ্যা এবং প্রমাণ সরবরাহ করতেন। এ ছাড়া প্রতিবেদক কোন সোর্স থেকে এসব তথ্য পেয়েছেন তা স্পষ্ট করে জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রতিবেদক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত কিংবা তার অফিসের কারও সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করেননি। এতেও প্রতীয়মান হয় যে, এ ধরনের অযৌক্তিক অভিযোগ কোনো প্রমাণ ছাড়াই করা হয়েছে। প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে এ ধরনের কাজ সাংবাদিকতার নৈতিকতা এবং সততা লঙ্ঘন করেছে এবং সম্পাদক ও প্রকাশকও এটি অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয়, যাকে নিয়ে সংবাদটি তৈরি করা হয়েছে তার কোনো মন্তব্য না নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যাকে অগ্রাধিকার দিয়ে শুধু চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে পত্রিকার বিক্রি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে একটি অবমাননাকর এবং বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করাটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও গর্হিত কাজ। এ ধরনের নিন্দনীয় আচরণ সাংবাদিকতার যেকোনো নৈতিক মানদণ্ডের চরম লঙ্ঘন। অর্থাৎ নিবন্ধটি বিদ্বেষপূর্ণ এবং একটি ঘৃণ্য উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করা, তার মানহানি এবং তাকে অন্যায়ভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রভাবিত ও প্ররোচিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সমকাল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিবেদনের অসত্যতা বুঝতে পেরে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিবাদটি প্রকাশ করেছে। এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। এমনিভাবে ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের হিসেবে শুধু মানসিকভাবে হয়রানি করার জন্য অনেকের বিরুদ্ধেই কোনো কোনো মিডিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ পরিবেশন করে চলেছে। এ ধরনের প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড কারও জন্য সুখকর নয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে অতীতের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ ইতোমধ্যেই সুধী সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে এবং স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে।
এদিকে দেশের এ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার তৎপরতা শুরু করেছে। কেউ যাতে এ ধরনের কাজ করতে না পারে সে দিকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। কারণ ইতোমধ্যেই কিছু মহল বিভিন্ন সেক্টরের প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার উদ্দেশ্যে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অতএব সাধু সাবধান।
এমনকি কিছু গণমাধ্যমও এ কাজে যুক্ত হয়ে অনেকের নামে বেনামি উড়ো চিঠির মতো উদ্ভট, মিথ্যা, বানোয়াট ও বায়বীয় সংবাদ পরিবেশন করেছে। এরই অংশ হিসেবে দু-একটি সংবাদপত্র তাদের ঘনিষ্ঠজনদের অপকর্ম ঢাকার অপপ্রয়াসে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার স্বার্থে গণমাধ্যম দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করবে- এটাই সবাই প্রত্যাশা করে।
http://dlvr.it/TCBxmc
0 Comments