Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ফুটে ওঠে ব্যাংকখেকো ম খা আলমগীর ও বাবুল চিশতীর অপকর্মের চিত্র

নিজেদের হাতে গড়া চতুর্থ প্রজন্মের তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংককে ধ্বংস করতে বিভিন্ন ধরনের ছক কষেছিলেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান (ম খা) আলমগীর ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর মাত্র দুই বছরের মধ্যেই ব্যাংকটি লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়।
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছেন ব্যাংকটির তৎকালীন ইসি কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক ওরফে বাবুল চিশতী। তিনি তার অসাধু উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যাংকটির রাজধানীকেন্দ্রিক সব শাখার বড় গ্রাহকদের ব্যবহার করেছেন।
ম খা আলমগীর ও বাবুল চিশতী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে মূল্যায়ন না করে শুধু মতিঝিল শাখা থেকেই প্রথম দুই বছরে ১১৬ কোটি টাকার বেশি অনিয়ম করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৫ সালের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী প্রথম দুই বছরে মতিঝিল শাখায় যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তার বেশিরভাগই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দেয়া হয়েছে। ঋণ অনুমোদনের আগেই বিতরণ করা হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ অধিগ্রহণ ও মার্জিন ঋণ প্রদান করা হলেও যথাযথ জামানত বা ঝুঁকি বহনের সক্ষমতা বিবেচনা না করেই দেয়া হয়েছে অনেক বড় অংকের ঋণ।
ঋণ অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দায়-দেনার বিবরণী সংগ্রহ করার আগেই ঋণ বিতরণ এবং অনুমোদনের থেকে অনেক বেশি বিতরণের অভিযোগও রয়েছে। এক খাতের ঋণ ভিন্ন খাতে দেখিয়ে তা সরিয়ে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। যে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেয়া হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তির আবেদনেও দেয়া হয়েছে বড় অংকের ঋণ। এছাড়া যৌক্তিক বিচার-বিশ্লেষণ না করেই ঝঁকিপূর্ণ ঋণ বিতরণ করে নেয়া হয়েছে সুবিধা।
২০১৪ সালের ২০ মে পান্ডুঘর লিমিটেড নামের এক কোম্পানির নামে ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে ১৫ কোটি টাকার একটি ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ কোটি টাকা একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদি ঋণ অধিগ্রহণের জন্য এবং ২ কোটি টাকা সহযোগী প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন সংস্থানের জন্য ওভার ড্রাফটের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অনুমোদনের আগে অধিগ্রহণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি, যা বিধিবহির্ভূত। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে পান্ডুঘর লিমিটেড নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আদ-দ্বীন হাসপাতল লিমিটেডের নামে একটি চলতি হিসাব খোলা হয়। কিন্তু হিসাবটি খোলার আগেই হাসপাতালের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। কিন্তু সেই প্রকল্পের জন্যই যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ২০ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণের আবেদন জানানো হয়। পরবর্তী মাসের ৫ তারিখে ৫ বছর মেয়াদে এ ঋণ অনুমোদনও করা হয়। কিন্তু এ ঋণের অর্থ উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন কোম্পানিটির সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলারের নির্দেশনার লঙ্ঘন।
ইস্ট-ওয়েস্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইস্ট-ওয়েস্ট ফ্যাশন গার্মেন্ট লিমিটেডের নামে ২০১৪ সালের ১৮ মে ছয় বছর মেয়াদি ৬ কোটি টাকার একটি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে দুটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোম্পানিটির অপর দুই প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া ২৩ কোটি টাকাসহ সহযোগী ৫ প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬০ কোটি টাকা ঋণ আবেদন করে ইস্ট-ওয়েস্ট ফ্যাশন গার্মেন্টস। এর বিপরীতে কোম্পানিটিকে পূর্বের অনুমোদিত ৬ কোটিসহ মোট ৪০ কোটি টাকা ঋণ সুবিদা প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানির ঋণ-ঝুঁকি বিশ্লেষণ ছাড়াই অধিগ্রহণের নামে গ্রাহককে অতিরিক্ত ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে, যা বিআরপিডির নির্দেশনার লঙ্ঘন।
প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজে ২০১৪ সালের ১৮ জুন ৫ কোটি টাকার একটি ওভার ড্রাফট (ওডি) অনুমোদন করা হয়েছে। এ ঋণের মেমোতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমোদন রয়েছে। আর নির্বাহী কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত মর্মে কমিটির চেয়ারম্যানের সিল ও স্বাক্ষর থাকলেও অনুমোদনের তারিখ উল্লেখ নেই। অর্থাত মেমোটি নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন না করেই কমিটির চেয়ারম্যান বাবুল চিশতী বিধিবহির্ভূতভাবে অনুমোদন করেছেন। এছাড়া প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজের এই ঋণ মূলত মার্জিন ঋণের অর্থ সংস্থানের জন্য নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে এ ধরনের ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তার বিপরীতে জামানত রাখা হয়নি।
এর বাইরে চিটাগাং ফ্যাশন টেকনোলজি লিমিটেডকে ২০১৪ সালের ১৮ মে ৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে লিজ ফাইন্যান্স ঋণ হিসেবে অনুমোদিত ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ছাড়পূর্বক কোম্পানির চলতি হিসাবে স্থানান্তর করে নগদ উত্তোলন করা হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।
এছাড়া সিয়াম এন্টারপ্রাইজকে ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি ৪ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা দেয়ার অনুমোদন করা হয়। কিন্তু নির্বাহী কমিটির সভায় এ ঋণের এলটিআর সীমা এলসির ভেতরে না রেখে আরও ২ কোটি ৫৫ লাখসহ মোট ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নিয়মবর্হিভূতভাবে ঋণ প্রদান করা হয়। এর বাইরে ৬ মাস মেয়াদি ঋণের অনুমোদন করে কোম্পানিটিকে তা অন্যত্র সরিয়ে নিতে সুবিধা দেয়া হয়।
২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এইচ এম এন্টারপ্রাইজের ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু এ অর্থ ছাড় হওয়ার পর তা কোম্পানিটির দুটি ঋণ হিসাবে সমন্বয় করা হয়েছে, যা বিআরপিডির নির্দেশনার লঙ্ঘন। পরবর্তীতে কোন প্রকার যৌক্তিক বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া কোম্পানির ঋণসীমা একাধিক বার বর্ধিতকরণ এবং আরও ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়।
শুভ্র এন্টারপ্রাইজ ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহে ২০১৪ সালে প্রথম দফায় ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোম্পানিটির নামে যে ব্যক্তি আবেদন করেছেন তার সঙ্গে কোম্পানির কোনো প্রকার সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও ঋণ দেয়া হয়েছে। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডির নির্দেশনার লঙ্ঘন।
এছাড়া কোম্পানির ঋণ নির্ধারিত সময়ে সমন্বয় না করা সত্ত্বেও নিয়মবহির্ভূতভাবে বাড়তি সুবিধা দিয়ে আরও ২ কোটি টাকা মেয়াদি ঋণ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান বাবুল চিশতীর সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল।
এছাড়াও এন আর ট্রেডিংয়ের নামে ২০১৪ সালে ২৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার ওভার ড্রাফট অনুমোদন হলেও ঋণ অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১১ গুণ বেশি। অর্থাৎ ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণ সুবিধা অনুমোদন করা হয়েছে কোম্পানিটিকে, যা বিআরপিডির নির্দেশনার লঙ্ঘন।


http://dlvr.it/TCC2rZ

Post a Comment

0 Comments