নেত্রকোণার মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়াকে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন নূরুল আলম কামাল মণ্ডল নামে এক কৃষক লীগ নেতা।
জানা গেছে, ওই কৃষক লীগ নেতা প্রতিবেশী খায়রুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ দেন জেলা প্রশাসকের কাছে। পরে ওই অভিযোগের সূত্রে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়। এ নিয়ে এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়।
প্রতারণা করে তার নাম ব্যবহার করে মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে খায়রুল ইসলাম চট্টগ্রাম থেকে সম্প্রতি এলাকায় এসেছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন যে তার নাম ব্যবহার করে কৃষক লীগ নেতা নূরুল আলম কামাল মণ্ডল ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় ওই কৃষক লীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেন খায়রুল ইসলাম।
রোববার সকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।
খায়রুল ইসলাম নেত্রকোণার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মৃত সুলতু মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রামে পরিবারসহ বসবাস করেন এবং সেখানে দিনমজুরের কাজ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত নূরুল আলম কামাল মণ্ডল মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মাওলানা আব্দুল মন্নাফের ছেলে। তিনি মদন উপজেলা শাখা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
স্থানীয় লোকজন ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল থেকে রাজস্ব আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে গত ৪ সেপ্টেম্বর মদনের ইউএনওর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন গোবিন্দশ্রী গ্রামের খায়রুল ইসলাম। কিন্তু খায়রুল ইসলাম কয়েক বছর ধরে জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
খায়রুল ইসলাম নিরক্ষর। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার টিপসহি থাকলেও অভিযোগে খায়রুল ইসলামের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে খায়রুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যোগাযোগ করেন। খবর পেয়ে তিনি চট্টগ্রাম থেকে মদনে আসেন। পরে জানতে পারেন তার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে কৃষক লীগ নেতা গোবিন্দশ্রী গ্রামের প্রতিবেশী নূরুল আলম কামাল মণ্ডল ইউএনওর বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ দায়ের করেছেন।
প্রতারণা করে হয়রানি করার জন্য কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে ২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন খায়রুল ইসলাম।
খায়রুল ইসলাম বলেন, আমি গরিব মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। ছয় মাস আগে একবার বাড়িতে এসেছিলাম। এর পর আর বাড়ি আসা হয়নি। এখন আমার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ইউএনও স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি তো ইউএনও স্যারকে চিনি না। জীবনে কখনও তাকে দেখিনি। আমি জীবনে ডিসি স্যারের অফিসেও যাইনি।
তিনি বলেন, বাড়িতে এসে জানতে পারলাম প্রতিবেশী কৃষক লীগ নেতা কামাল মণ্ডল আমার নাম ব্যবহার করে ডিসি অফিসে অভিযোগ করেছেন। ওই ভুয়া অভিযোগপত্রে দেখলাম আমার স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ আমি নিরক্ষর মানুষ, ভোটার আইডিতেও টিপসহি দিয়েছি। তাই এই ঘটনায় জড়িত কামাল মণ্ডলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডিসি মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আমি চাই এমন প্রতারণা করার সাহস আর কেউ যেস না করে।
গোবিন্দশ্রী গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, কৃষক লীগ নেতা কামাল মণ্ডল দলীয় প্রভাবে এলাকার খাল ও খাস জমি দখল করে বিক্রি করেছেন। প্রভাব টিকিয়ে রাখতে কয়েক মাস আগে তিনি সাংবাদিক পরিচয়ে কার্ডও নিয়েছেন। খায়রুল ইসলামের মতো একজন নিরীহ মানুষের নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার আমরা প্রতিবাদ জানাই।
অভিযুক্ত কৃষক লীগ নেতা কে এইচ এম নূরুল আলম কামাল বলেন, আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এটা কাদা ছোড়াছুড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, গত মাসে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার খবর শুনেছি। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে প্রশাসন অবশ্যই আমার বিরুদ্ধে যথাযথ নেবে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ এ কাজ করে থাকলে তদন্তের মাধ্যমে তা বের হয়ে আসুক। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে যেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, দুটি অভিযোগই পেয়েছি। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
http://dlvr.it/TF3Kw1
0 Comments