চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) এম এ লতিফ। আসনটিতে তিনবারের এই এমপির সঙ্গে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল হক সুমন।
নানা অনিয়ম-দুর্নীতিসহ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার অভিযোগ এনে এম এ লতিফের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। প্রকারান্তরে নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে নগর আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, অর্থনীতির হৃদপিণ্ড হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১১ আসনে এম এ লতিফ আবার মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রামের ৮ ও ১০ আসনে কয়েকজন দলীয় নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তাদের প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়নি নগর আওয়ামী লীগ, কিন্তু চট্টগ্রাম-১১ আসনে এম এ লতিফের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সুমনকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন খোদ নগর আওয়ামী লীগ নেতারা। থানা-ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও সুমনের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
লতিফের সঙ্গে এবার নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুমন ছাড়া তেমন কোনো হেভিওয়েট নেই। ইসলামী ফ্রন্ট, জাসদ, সুপ্রিম পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, এনপিপি ও গণফোরামের প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে লতিফ ও সুমনের। চট্টগ্রামের অন্য আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়েও এই আসন ঘিরে আলোচনা তুঙ্গে। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়কে কাশিমবাজার কুঠি এবং নেতাদের ফ্রিডম পার্টির লোক বলায় লতিফকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নগর আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া লতিফের দলবিরোধী কার্যকলাপ তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, লতিফ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টানা তিনবার এমপি হলেও দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে উন্নয়ন সমন্বয় করেন না। তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করেছেন। বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মিছিল-সভা, সমাবেশে উপস্থিত থাকেন না।
তাদের ভাষ্য, নারী শক্তি নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে এম এ লতিফ তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনকে বেছে নিয়েছেন দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এমনকি জ্যেষ্ঠ নেতারাও সুমনকে জয়ী করতে জোট বেঁধেছেন। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহধর্মিণী মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিনও লতিফের বিরুদ্ধে গিয়ে সুমনের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, উনাকে (লতিফ) মনোনয়ন দেয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। লতিফ সাহেবের বিগত দিনের কর্মকাণ্ডে ওয়ার্ড ইউনিট, থানা, মহানগরের নেতা-কর্মী সবাই অতিষ্ঠ। এই আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য লিখিত অনুরোধ করা হয়েছে। যেই লোক বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে, জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে যার কোনো অবস্থান নেই, নেতা-কর্মীদের সাথে সম্পর্ক নেই, বারবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্ম দেন, তিনি কীভাবে বারবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন?
প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত চিঠি দেয়ার ব্যাপারে সভায় আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া এমএ লতিফ পত্রপত্রিকায় অব্যাহতভাবে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে অশোভন ও কটাক্ষমূলক বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানাতে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বন্দর-পতেঙ্গা-ইপিজেড থানার ইউনিট, ওয়ার্ড এবং থানার নেতারা এবং সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলররা আমাদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, এই আসনের সংসদ সদস্য গত ১৫ বছর ধরে দলের ইউনিট থেকে শুরু করে ওয়ার্ড, থানার কোনো নেতার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক রাখেননি। সরকারের কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করেননি।
সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা-অনুদানসহ যাবতীয় কিছু দলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে বিতরণ না করে অনেক ক্ষেত্রে নিজের আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে বিতরণ করেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও তাকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা তাদের ক্ষোভের কথা কেন্দ্রে জানাতে অনুরোধ করেন।
বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এম এ লতিফ বলেন, এলাকার কিছু লোক যারা নানা সময় সুবিধার জন্য আমার কাছে এসেছিল, তাদেরকে আমার কাছে ভিড়তে না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা প্রলাপ বকছেন। যারা অবৈধ কাজে জড়িত, যারা অনৈতিক কাজ করে, তারাই আমার বিরুদ্ধে বলছে।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ এবং এই আসনের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সমর্থনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমরা ব্যক্তির বিরুদ্ধে, নৌকার বিরুদ্ধে নই।
আমি ৩০ বছর ধরে রাজনীতির মাঠে আছি। আমি দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। আমি মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকি। জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে জানান দেবে। আমি জয়ের জন্য শতভাগ আশাবাদী।
এম এ লতিফ ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান তিনি। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচিত হন এ নেতা।
http://dlvr.it/T0ZGh0
0 Comments